আইনজীবীদের সনদ দানকারী ও পেশাগত বিষয়ের নিয়ন্ত্রণের একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। অপেক্ষা এখন নবনির্বাচিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন নিয়ে। কে হচ্ছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা। আলোচনায় আছে তিনজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম।
এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতেই জয় পেয়েছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। কাজেই স্বাভাবিকভাবে সরকারপন্থীদের মধ্য থেকেই একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। নিয়ম অনুযায়ী পদাধিকার বলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন। আর নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত বা ভোটের মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়।
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচনের ফলাফল এখন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেটের ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এর নেতৃত্বে নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করা হবে। সেই সভাতেই নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে ভোটের মাধ্যমে তাদের একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
এই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের তিনজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম। তারা হলেন- বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।
তবে এ তিনজনের মধ্যে আইনজীবী মহলে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন আব্দুল বাসেত মজুমদার। যিনি এবারসহ পরপর দুবার সাধারণ আসনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থী প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তবে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ায় তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে আব্দুল বাসেত মজুমদারকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।
এবার আব্দুল বাসেত মজুমদারের নেতৃত্বেই আওয়ামীপন্থীরা আরও বড় রকমের সাফল্য লাভ করে। একইভাবে এবারও সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন এই সিনিয়র আইনজীবী। তাই স্বাভাবিকভাবে এবারও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
বাসেত মজুমদার দ্বিতীয় বারেরমতো ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার নির্বাচিত হলে তৃতীয় বারেরমতো আইনজীবীদের শীর্ষ এই সংগঠনের নির্বাচিত সর্বোচ্চ পদে আসীন হবেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে এবার কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, আমি টানা দ্বিতীয়বার আইনজীবীদের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। যা এর আগে কারও ক্ষেত্রে হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আামি এবারও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করবেন বলে আমি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, সবসময় আইনজীবীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যতোটা সম্ভব সব বার অ্যাসোসিয়েশনে আর্থিক অনুদানও প্রদান করেছি। তাই সাধারণ আইনজীবীদেরও এটা প্রত্যাশা যে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করা হবে।
আওয়ামী প্যানেল থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরেকজন সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমানের নামও শুনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও পূর্ববর্তী কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হয়নি। চলতি কমিটির মেয়াদ শেষে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ পাবে। তারপর বৈঠক আহ্বান করে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখনও গেজেট না হওয়াই ভাইস চেয়ারম্যানের বিষয়ে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।
আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্য ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোখলেসুর রহমান বাদল এ বিষয়ে বলেন, এখনও এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়নি। আগামী ২১ জুন পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ রয়েছে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গেজেট জারি করা হবে তার পর ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন।
নবনির্বাচিতদের মধ্য থেকে কে হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান তা দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্ধারণ করবেন বলেও জানান তিনি।
তিন বছর মেয়াদের কমিটি করার জন্য গত ১৪ মে বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ২৬ মে ভোটের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যাতে নির্বাচিত ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতেই সরকারপন্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বাকি দুটি পেয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এখন শুধু অপেক্ষা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের। কে হচ্ছেন নবনির্বাচিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন আইনজীবীরা। জাগো নিউজ