অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে খুলনার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ারকে চট্টগ্রাম লেবার কোর্টে বদলির পর সে আদেশ স্থগিত হওয়ায় খুলনার আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনৈতিক ও অবিচারিক কর্মকাণ্ড ও অর্থের বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন দেয়ার অভিযোগ তুলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তাকে খুলনা থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছেন।
আইনজীবীদের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে জেসমিন আনোয়ার যোগদানের পর থেকেই অনৈতিক ও অবিচারিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অর্থের বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের একের পর এক জামিন দেন। এছাড়া তিনি সরকারি বাসভবনে বসবাস করেও ‘বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করছেন’ দেখিয়ে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং তাকে খুলনা থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৫ এপ্রিল খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবর রহমান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ফারাজী, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, শেখ ইউনুস আহম্মেদ, শেখ সোহরাব হোসেন, আব্দুল মালেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান, শেখ নূরুল হাসান রুবা, মোল্লা মোহাম্মদ মাসুম রশিদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। জেলা জজ জেসমিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে আনা আইনজীবীদের এসব অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ এমপি, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি তাকে অবিলম্বে খুলনা থেকে প্রত্যাহারের জন্যে আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত সুপারিশ করেন।
আইনজীবীদের উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ারকে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান ও তাকে খুলনা থেকে চট্টগ্রামের লেবার কোর্টে বদলি করা হয়। কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানান।
এদিকে জেলা জজের বদলির আদেশ স্থগিত হওয়ায় খুলনার আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে তাকে খুলনা থেকে প্রত্যাহার করা না হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, সেখানে সেখানে জেলা ও দায়রা জেসমিন আনোয়ার মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন দেওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।
তবে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সিনিয়র আইনজীবী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাছাড়া অর্থ আত্মসাতের যে অভিযো করা হয়েছে তাও ঠিক না। আমি মন্ত্রণালয়ে বিল পাঠিয়ে দিয়েছি।