তরুণীকে প্রাইভেটকারে তুলে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর কলেজগেটে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে পথচারীরা। পরে মদ্যপ অবস্থায় মাহমুদুল হক রনি নামে এক যুবককে সোপর্দ করা হয় পুলিশের কাছে। এ ঘটনায় ফারুক নামে অভিযুক্ত অপর যুবক পালিয়ে গেছে। শনিবার রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গণপিটুনির দৃশ্য কয়েকজন মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক রনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। বর্তমানে ঢাকার জিগাতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে রোববার রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন এক তরুণী। অপহরণ করে ধর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
দুই তরুণীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে দুই তরুণীকে সংসদ ভবন সংলগ্ন খেজুরবাগান এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে তোলেন মাহমুদুল হক রনি ও তার প্রাইভেটকার চালক ফারুক। গাড়িটির মালিক রনি। কলেজগেট এলাকায় এক তরুণীকে নামিয়ে দেন এবং অপর তরুণীকে গাড়ির মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় যে তরুণীকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল সে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গাড়িটি আটক করে। পরে গাড়ি থেকে রনি ও তার চালক ফারুককে বের করে গণধোলাই দেন তারা। গণধোলাইয়ের মধ্যেই ফারুক পালিয়ে যান। রনিকে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন পথচারীরা।
পুলিশ জানায়, মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন রনি। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গণধোলাইয়ের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবককে গাড়ি থেকে বের করে মারধর করা হচ্ছে। মারধরের একপর্যায়ে দুই যুবকের শরীরের পোশাক ছিঁড়ে যায়। বিবস্ত্র হয়ে পড়েন তারা। চালককে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় তাতে।
আটকের পর রনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, দুই তরুণী ‘যৌনকর্মী’। সংসদ ভবন সংলগ্ন খেজুরবাগান এলাকা থেকে তাদের গাড়িতে তোলেন। কলেজগেট এলাকায় এক তরুণীকে নামিয়ে দেওয়ায় সে চিৎকার করে। এ সময় লোকজন তাদের ধরে গণধোলাই দেয়। তবে তার গাড়ির মধ্যে যে মেয়েটি ছিল সে চিৎকার করেনি বলে দাবি তার।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গণধোলাইয়ের সময় রনির চালক পালিয়ে যায়। রনিকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই দুই তরুণী ওই এলাকা ত্যাগ করেছিল। রোববার তাদের খুুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তারা জানিয়েছে, সংসদ ভবন এলাকা থেকে তাদের প্রাইভেটকারে তোলা হয়েছিল। গাড়ির চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্র্রত্যক্ষদর্শী রাফি আহমেদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন- শনিবার গভীর রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে কলেজগেট সিগন্যালে তার গাড়ির সামনে আরেকটি প্রাইভেটকার দেখতে পান। গাড়ির ভেতরে আটকে রাখা এক তরুণী নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তবে রাস্তায় যানজট থাকায় গাড়িটি বেশিদূর এগোতে পারেনি। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকার চালক ও মালিক রনিকে বেদম মারধর করে পথচারীরা। মারধরের চোটে কাপড় ছিঁড়ে গেলে চালক নগ্ন অবস্থায় গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা দুই তরুণীর মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে বক্তব্য পাওয়া যায়নি তাদের। (যুগান্তর)