মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গত বছর ৬০ শতাংশ আসামি ছাড়া পেয়েছেন। বিভিন্ন আদালতে এখনো বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আসামি খালাস হওয়ার পেছনে তাদের দুর্বল আইন শাখাকে দায়ী করেছে। অধিদপ্তর বলছে, ৫০০টি আদালতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা আছে। কিন্তু সরকারপক্ষে কৌঁসুলি আছেন ১২ জন আর সহকারী কৌঁসুলির সংখ্যা ৩৭। গত ৫ বছরে গ্রেপ্তার ও মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়লেও শুধু আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ায় প্রতিবছর খালাস পাওয়া আসামির হারও বেড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে পৃথক আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলনামূলক হিসেবে ২০১৩ সালে ৪৬ শতাংশ আসামি ছাড়া পেলেও গত বছর এই হার বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশ। গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে মামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪৬টি। গ্রেপ্তার হন ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৩ জন। ২০১৬ সালের তুলনায় গত বছর মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার বেশি ছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁরা আসামি গ্রেপ্তার করলেও ধরে রাখতে পারছেন না। বিশেষ করে রাঘববোয়াল ধরনের আসামি হলে তো কথাই নেই। বড় আইনজীবীরা আদালতে তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান। তিনি আরও বলেন, কৌঁসুলিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। তাঁরা দক্ষতায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের থেকে পিছিয়ে থাকেন, অনেকের মামলা জেতায় খুব একটা আগ্রহও দেখা যায় না।
ইয়াবাসহ মাদকের সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকা, উৎস সীমান্ত এলাকা
মোট ৩২টি পয়েন্ট থেকে মাদক ঢোকার তথ্য দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে সীমান্তবর্তী এসব এলাকা থেকে আসা মাদকের গন্তব্য ঢাকা। সারা দেশে যত মাদক বিক্রি হয়, তার ৫০ ভাগই ঢাকায় বিক্রি হয়।
ইয়াবা সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হচ্ছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে। কক্সবাজার থেকে ঢুকে ইয়াবা সোজা ঢাকায় চলে আসে। ভারত থেকে রাজশাহী ও খুলনা হয়ে হেরোইন এবং যশোর, দিনাজপুর, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া সীমান্ত হয়ে ফেনসিডিল ঢাকায় আসে। ইয়াবার মতো হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজারও সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকা।
মাদকসেবীদের মধ্যে যুবক ও উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণের সংখ্যা বেশি। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সংখ্যা কম হলেও এই বয়সী শিশুদের মাদক সেবনের হার বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে মোট মাদকসেবীর ১ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল এই বয়সের শিশু, গত বছর এই হার ২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছে
গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। প্রকোপ না কমা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ বাদ যাবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের কারাগারে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের বলছি, আপনাদের জায়গা হবে কারাগার। না হলে কোথায় আপনারা যাবেন, সেটা আপনারাই দেখবেন।’
গতকাল অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশের ভেতর শুদ্ধি অভিযান চলছে। সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। গডফাদাররাও ছাড় পাবেন না। কোমরে রশি বেঁধে তাদের নিয়ে আসা হবে। প্রথম আলো