সব সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা, মান-অভিমান হয়। কিন্তু সন্তানের দিকে তাকিয়ে আপনাদের (মা-বাবার) সমঝোতা করা উচিত বলে এক মামলার শুনানিতে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব চলতে থাকায় সন্তানকে দেখারও সুযোগ পাননি বাবা। তাই নিজের সন্তানের দেখা পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। পরে ছয় বছরের শিশু ইমতিয়াজ আহমেদ বিশাল আপাতত মায়ের কাছেই থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে যখন খুশি তখন তার পিতা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। একইসঙ্গে শিশুটি চূড়ান্তভাবে কার হেফাজতে থাকবে সে বিষয়ে চলমান মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট গত ২৯ মে পল্লবী থানা পুলিশ এবং শিশুটির মা সুমাইয়া সুলতানাকে আদেশ দেন শিশু বিশালকে ২৬ জুন আদালতে হাজির করতে। গতকাল বিশালের সঙ্গে দুই পরিবাবের সদস্যরাও হাইকোর্টে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে আদালত শিশুটির মা-বাবার বক্তব্য শোনেন। এর মধ্যে শিশুর বাবা মোস্তফা আহমেদ রুবেল তাঁর শিশু সন্তানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। ছেলের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে আদালত কক্ষেই কাঁদতে থাকেন তিনি। রুবেল আদালতকে জানান, তিনি সুমাইয়ার সঙ্গে সংসার করতে রাজি আছেন। তবে সুমাইয়ার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত আগামী ১১ জুলাই পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।
এ সময় আদালত শিশুটির মা-বাবাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘একটি দুধের শিশুকে আদালতে আসতে হয়েছে আপনাদের কারণে। আপনারাই শিশুটির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছেন।’ আদালত বলেন, ‘যেহেতু দুজনের কেউই আর বিয়ে করেননি, তাই নিজেদের সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানো যায় কি না তা ভেবে দেখুন। সব সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা, মান-অভিমান হয়। কিন্তু এই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সমঝোতা করা উচিত।’
রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইসমাঈল আহমেদের ছেলে মোস্তফা আহমেদ রুবেল। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সময় রুবেলের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমাইয়ার এবং সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই বিয়ে হয় পল্লবীর মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সুমাইয়া সুলতানার। ২০১২ সালের ৬ জুলাই জন্ম হয় বিশালের। কিন্তু গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশালকে নিয়ে তার মা সুমাইয়া সুলতানা বাবার বাড়ি পল্লবী চলে যান। মোস্তফা আহমেদ রুবেলের অভিযোগ, একপর্যায়ে সুমাইয়া তাঁকে তালাকানামা পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে উদ্ধার
করে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন রুবেল।
শুনানি শেষ হলে একপর্যায়ে রুবেলের ছোট বোন ভাবি সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন এবং ফিরে আসার অনুরোধ জানান। সাড়া দেননি সুমাইয়া।