পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম এম মনির-উজ-জামানকে বদলি করা হয়েছে। মনির-উজ-জামানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। খবর বিডিনিউজের
গতকাল সোমবার (২ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি মনির-উজ-জামানের বদলির আদেশ হয়। তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়েছে। একই আদেশে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. খন্দকার গোলাম ফারুককে পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জে।
খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জমি নিয়ে বিবদমান একটি পক্ষের ‘প্ররোচনায়’ অন্য পক্ষের ষাটোর্ধ্ব সমর চৌধুরীকে গত ২৭ মে পুলিশ ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সমর চৌধুরীর মেয়েরা পরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের প্ররোচনায় ডিআইজি মনির-উজ-জামানের প্রভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বাবাকে। সঞ্জয় দাশের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার কাকা স্বপন দাশের। স্বপনকে সহযোগিতা করায় সমরের উপর সঞ্জয় ক্ষিপ্ত হন বলে দাবি করেছে সমরের পরিবার।
এছাড়াও ‘ইয়াবা কারবারির পাশে ডিআইজি’ শিরোনামে এমএম মনির-উজ-জামানকে নিয়ে গত ১১ জুন দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের টাকায় আপসরফা করে জিএম ছারোয়ার নামে এক ইয়াবা কারবারিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেন ডিআইজি মনির। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া ও চট্টগ্রামের একাধিক ইয়াবা কারবারি ও গডফাদারকে মামলা থেকে রেহাই এবং যাতে তাদের গ্রেপ্তার বা চার্জশিটের আসামি না করা হয়, সে জন্য ওসিদের চাপে রাখতেন; বিনিময়ে সুবিধা নিতেন।
ইয়াবা কারবারিদের সুবিধা দেওয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের ১১ জেলায় ওসি, ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআইদের গণহারে বদলি করতেন। আবার টাকার বিনিময়ে এসব কর্মকর্তাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতেন মনির-উজ-জামান। চট্টগ্রাম রেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি পদ তুলতেন নিলামে। পরে ওসিরা ডিআইজিকে যে টাকা দিয়ে পোস্টিং নিতেন সেই টাকা তুলতে নানা অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রামু থানার একটি মামলা থেকে ইয়াবা কারবারি জিএম ছারোয়ারকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর এসব তথ্য জানতে পারে। অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডিআইজি মনিরুজ্জামান গত ২৬ এপ্রিল কক্সাবাজার জেলার ৩৯ জন এসআইকে একযোগে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বদলি করেন। এই ৩৯ জনের মধ্যে যারা ডিআইজির সঙ্গে তার চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দেখা করেন, তারা স্বপদে বহাল থেকে যান। আর যারা দেখা করেননি, তাদের বদলিকৃত জায়গায় যোগ দিতে হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর রামু থানা পুলিশ ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ একটি প্রাইভেটকার ও তার চালক দ্বীন ইসলামকে আটক করে। গাড়িচালক দ্বীন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ইয়াবার চালানের মালিক হিসেবে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিএম ছারোয়ারের নাম বলে দেন। এ ছাড়া গাড়িচালকের মোবাইল ফোনে জিএম ছারোয়ারের ইয়াবা সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর এসএমএস উদ্ধার করে রামু থানা পুলিশ। কিন্তু ইয়াবা কারবারি ছারোয়ারকে চার্জশিট থেকে বাদ দিতে রামুর ওসি লিয়াকত আলীকে চাপ দেন ডিআইজি মনির-উজ-জামান। ওসি লিয়াকত আলী চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির তদবির না শুনে জিএম ছারোয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো জিএম ছারোয়ারের অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশের নির্দেশ দেন ডিআইজি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ পেয়ে ঘটনার বিররণ ও কারণ দর্শানোর প্রতিবেদন দেন ওসি। ওসি লিয়াকত আলী একইভাবে প্রতিবেদনের দুটি কপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বরাবর পাঠান। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওসিকে প্রত্যাহার করে নেন ডিআইজি। এতসব ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশ তদন্তে নামে।