পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নাকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার (১১ জুলাই) সংস্থার উপরিচালক ঋত্বিক সাহা স্বাক্ষরিত এ নোটিশ জারি করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দুদকের পক্ষ থেকে মিজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীকে আলাদা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সম্পদের যাবতীয় হিসাব দুদক সচিবের বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন সংস্থাটির উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
দুদকের উচ্চপর্যায়ের একাধিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন ও ভাগনে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহামুদুল হাসানের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। সংস্থাটির ধারণা, এসব সম্পদের প্রকৃত মালিক হচ্ছেন ডিআইজি মিজান।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়ার কারণে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী কমিশনের কাছে মিজান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ জারির আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় মিজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করার অনুমোদন দেয় কমিশন।
দুদক সূত্র জানায়, মিজানুর রহমান আয়কর নথিতে তাঁর নামে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে আয়কর নথির বাইরে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ মিলেছে।
অন্যদিকে মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু আয়ের উৎস অনুসারে তাঁর সম্পদ থাকার কথা ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ টাকার। সে অনুযায়ী দুদকের অনুসন্ধানে সোহেলিয়ার আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার সম্পদ রয়েছে।
এর বাইরে মিজানুর রহমানের ছোট ভাইয়ের নামে রাজধানীর বেইলি রোডে বেইলি রোজ নামের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ভাগনে মাহামুদুল হাসানের নামে চাকরিতে প্রবেশের আগেই ঢাকার পাইওনিয়ার রোডে ১ হাজার ৯১৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। দুদক ধারণা করছে, ডিআইজি মিজানই তাঁদের নামে এসব সম্পদ করেছেন।
এর আগে এ বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
ওই দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আয়কর নথিতে দেওয়া তথ্যের বাইরে তাঁর কোনো সম্পদ নেই। স্বজনদের নামে সম্পদের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মিজান বলেন, ‘যে যে জায়গায় সম্পদ আছে বা আমার আত্মীয়স্বজনের নামে যে সম্পদ আছে, তা আমার ট্যাক্স ফাইলে আছে।’
ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানুরের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তারকে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেই কথা গোপন রাখার শর্ত দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। মরিয়ম রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গত ১২ ডিসেম্বর পুলিশ পাঠিয়ে মরিয়মকে গ্রেপ্তার করান। মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশের তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।
সম্প্রতি মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন। ওই সংবাদপাঠিকা প্রথমে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, মিজানুর রহমান মুঠোফোনে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বাড়ির বাইরে বের হলে তাঁকে হেনস্তা করবেন এবং অশ্লীল ছবি তৈরি করে প্রচার করবেন। ১০ এপ্রিল তিনি তাঁর নামে খোলা একটি ফেসবুক পেজের কথা জানতে পারেন। তিনি দেখতে পান, ওই পেজ তাঁর নামে খোলা এবং সেখানে তাঁর ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে সংবাদপাঠিকা অভিযোগ জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন।