‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর’- এই চেনা কথাটা কেবল সচেতনতামূলক বাক্য হিসেবে থাকছে না। ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে জাপান। যেমন ধরুন- কোনো ভবনের ভেতরে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। যদিও এই বিধিবদ্ধ আইন কতটা সফলতার মুখ দেখবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যন্নোয়নমূলক এই আইন পুরোপুরি কার্যকর হবে। ওই বছরই জুলাই থেকে টকিও অলিম্পিকস এবং প্যারাঅলিম্পিক শুরু হতে যাচ্ছে দেশটিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চোখে তামাক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে জাপানের অবস্থা শোচনীয়। তাই অলিম্পিকের মতো বিশেষ আয়োজনের আগেভাগে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশটাকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলতে চায় জাপান।
এ সংক্রান্ত বিলটি গত মাসে জাপানের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভ-এ পাস হয়েছে। পরে হাউজ অব কাউন্সিলরস-এ পুনঃনিরীক্ষিণ শেষে সরকারি এবং বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের হাতেও পৌঁছেছে।
প্রথম ধাক্কাতেই স্কুল, হাসপাতাল এবং পাবলিক ইনস্টিটিউশনের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হবে। এই নিয়মের প্রয়োগ ঘটবে ২০১৯ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে। আর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে নীতিগতভাবে রেস্টুরেন্ট, বার, অফিস এবং হোটেলে সিগারেট টানা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অবশ্য এসব স্থানে ধূমপায়ীদের জন্যে বিশেষ কক্ষ থাকতে পারে। সেখানে আবার কোনো খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা থাকা চলবে না।
তবে কথা আছে। যেসব খাবারের দোকান এবং বার তৈরিতে ৫০ মিলিয়ন ইয়েন পর্যন্ত (৪ লাখ ৪৩ হাজার ডলার) মূলধন ব্যয় করা হয়েছে, সেসব স্থানে এবং তার ১০০ বর্গমিটারের মধ্যে ধূমপান করা যাবে। তবে সেখানে অবশ্যই ‘স্মোকিং অ্যালাউড’ জাতীয় সাইন থাকতে হবে। আবার এসব স্থানে চাইলেই ২০ বছরের কম বয়সীরা এসে ধূমপান করতে পারবেন না। এসব স্থানে আইন ভঙ্গ করলে ধূমপায়ীদের ৩ লাখ ইয়েন (প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা) এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ৫ লাখ ইয়েন পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
অনেক খাবারের দোকান ও বারে ভোজনরত অবস্থায় ধূমপানের জন্যে বিশেষ তামাকের ব্যবহার করা হয়। এগুলো উত্তপ্ত হয়ে ধোঁয়া উৎপন্ন করে, কিন্তু পোড়ে না। এসব ব্যবহারেও বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেবে আইন।
জাপানের এই আয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় দেশটি উন্নতির দিকে গেলেও অনেকে কিছু বিষয়ে আপত্তি তুলছেন। যেমন- নিজের বাড়িতে বসে আয়েশ করে ধূমপানের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আনাটা কতটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ? আবার অনেক ক্ষেত্রে খাবারের দোকান আর বারেও ধূমপানে বাধা মানতে নারাজ অনেকে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেকোক্রেটিক পার্টির অনেক প্রভাবশালী সদস্যই ধূমপানের আসক্ত এবং তাদের অনেকের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে।
এদিকে, জাপানের জাতীয় সংসদের চেয়ে আরো বেশি কঠোর হয়েছে টকিও মেট্রোপলিটন। তাদের এক অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সব ধরনের বার এবং রেস্টুরেন্টে এক ‘দুর্বৃত্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হবে ধূমপান। এর জন্যে প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী বা ক্রেতার বয়স বিবেচ্য হবে না। গোটা টকিওর ৮৪ শতাংশ এলাকায় এই আইন প্রয়োগ করা হবে। সূত্র: এশিয়ান রিভিউ