পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নওয়াজকে কারাগারে রাখতে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে সেনাবাহিনী; স্বয়ং একজন বিচারপতি এই অভিযোগ তুলেছেন।
তবে হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র (ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুললেও দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ হাজির করেননি। অভিযোগের সময় সুনির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেননি তিনি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, একজন সিনিয়র বিচারপতির দিক থেকে এমন মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিরল।
উল্লেখ্য, বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে দুটি অভিযোগ মীমাংসার অপেক্ষায় রয়েছে, যার একটি সেনাবিরোধী মন্তব্যের কারণে।
ডন জানিয়েছে, শনিবার রাওয়ালপিন্ডি জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনে বক্তব্য দেন বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী। সে সময় তিনি অভিযোগ করেন, আসন্ন নির্বাচনের সময়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়েকে কারাগারে রাখতে আইএসআই ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ আনোয়ার খান কাসির কাছে হাজির হয়েছিলেন।
বিচারপতি শওকত দাবি করেন, প্রধান বিচারপতি কাছে গিয়ে ওই সংস্থা বলেছে, তারা চায় না নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাইরে আসুক। তার দাবি অনুযায়ী, শওকত আজিজ সিদ্দিকীকে নওয়াজের আপিল শুনানির বেঞ্চে না যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শওকত আজিজ বলেন, আজকের যুগে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পুরোপুরিভাবে জড়িত আইএসআই। তাদের কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামত বেঞ্চ গঠন করতে পারছে। বিচারিক বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেও নিজের বক্তব্যে তার কোনও প্রমাণ দেননি তিনি।
লন্ডনে কেনা চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেওয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের একাউন্টিবিলিটি আদালত। মেয়ে মরিয়মকে দেওয়া হয় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ১৩ জুলাই লন্ডন থেকে আবুধাবি হয়ে দেশে ফিরে গ্রেফতার হলে নওয়াজ ও মরিয়মকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের আপিলের শুনানির তারিখও আগামী ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনের পর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন,দুর্নীতি নয়, নওয়াজের পরিণতির কারণ সেনা বিরোধিতা। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে যার সূচনা করেছিলেন নওয়াজ। সেনাবাহিনীর নওয়াজবিরোধী ভূমিকাও কারও অজানা নয়। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রধানমন্ত্রিত্বে অযোগ্য ঘোষণা করার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেনাবাহিনীর নওয়াজবিরোধী অবস্থানের কথা উঠে আসে।
শনিবার কারও নাম উল্লেখ না করে বিচারপতি শওকত অভিযোগ করেন, ‘আমি জানি কার বার্তা কে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘একাউন্টিবিলিটি আদালতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের কাছ থেকে কেন নিয়ে নেওয়া হলো?’ তিনি অভিযোগ করেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে আর এখন তা ‘বন্দুকধারী ব্যক্তি’দের নিয়ন্ত্রণে। বিচারপতি শওকত সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল যদি আপনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে আপনার রায় আমাদের পক্ষে আসবে তা হলে আপনার বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগগুলো শেষ করে দেওয়া হবে।’ সেপ্টেম্বর নাগাদ তাকে প্রধান বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন শওকত।
উল্লেখ্য, বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে মীমাংসার অপেক্ষায় একটি অভিযোগ হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এক কর্মী তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছিলেন। দ্বিতীয়টিতে গত বছর নির্বাচনি বিল সংশোধনের প্রতিবাদে ফয়জাবাদ বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রশ্নের মুখে রয়েছেন তিনি। গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচনি আইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০ দিনেরও বেশি অবস্থান ধর্মঘট করে পাকিস্তানের ধর্মীয় সংগঠনগুলো। পরে সেনাবাহিনীর মধ্যস্ততায় এক চুক্তির আওতায় সরকার বেশিরভাগ দাবি মেনে নিলে ফয়জাবাদ অবস্থান ধর্মঘট নামে পরিচিত ওই বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এই বিক্ষোভে সেনা ভূমিকা নিয়ে মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রশ্নের মুখে রয়েছেন বিচারপতি শওকত।
নিজের দায়বদ্ধতা আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি শওকত বলেন, একমাত্র বারই সত্যিকারভাবে তাকে দায়বদ্ধ করতে পারে। আর দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি রায় ঘোষণার বিশেষ একটি গ্রুপ এই অভিযোগ নিয়ে হইচই শুরু করে। তিনি বলেন, বার যদি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
বিচারপতি শওকত বলেন পাকিস্তানকে ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করা না গেলেও ভারত বা বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যহত না হওয়ার কারণে ভারত উন্নতির পথে রয়েছে। বিচারপতি শওকত বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ৫০ শতাংশ দায়িত্ব বিচার বিভাগের কাধে রয়েছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে রয়েছে।’ বাংলাট্রিবিউন