ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে এক কলেজ থেকে দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কারের সমালোচনা করে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যের উচ্চ আদালত। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া দুই শিক্ষার্থীকে সেখানকার এক কলেজ থেকে বহিষ্কারের ঘটনা পর্যালোচনা করে ওই আদালত রায় দিয়েছে, প্রেম সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে এবং এটি মানুষের সহজাত মানবিক প্রবৃত্তি। প্রেমকে একান্তই মানুষের স্বাধীনতার বিষয় আখ্যা দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
রায়ে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও অধিকার নেই নৈতিক পিতৃত্ববাদের খড়গ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার।
বিবিএ শিক্ষার্থী মালবিকা বাবু (২০) ও একই বিভাগের সিনিয়র বিশাককে (২১) প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাদের বহিষ্কার করেছিল কেরালার সিএইচএমএম কলেজ ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ। কেবল কলেজ কর্তৃপক্ষই নয়, দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও তাদের সম্পর্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন তারা।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে সহজাত ব্যক্তিগত সম্পর্ক যে ব্যক্তির গোপনীয়তা এবং এতে হস্তক্ষেপ করার কোনও কর্তৃত্ব তাদের নেই।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই দুই শিক্ষার্থীর ভালোবাসার সম্পর্কের কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এমন কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই।
দুজন পালিয়ে বিয়ে করার পর মালবিকার মা পুলিশের কাছে নিখোঁজের একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে। পরে অবশ্য মালবিকার পরিবার পিছু হটে এবং বিশাকের সঙ্গে মেয়ের বিয়েকে সমর্থন জানায়।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ভালোবাসার সম্পর্ক ও গোপনে পালিয়ে যাওয়াকে অনৈতিক ও শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এটা কারও কারও কাছে অপরাধ আবার কারও কারও কাছে নয়। আইনের ক্ষেত্রে এটা একান্ততই ব্যক্তির পছন্দ, যা স্বাধীনতার সারমর্ম।
রায়ে আদালত জানায়, শিক্ষার উদ্দেশ্য নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলাবিধি আরোপের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে (ভালোবাসা) বিরোধ থাকলেই শিক্ষার্থীদের ওপর নৈতিক পিতৃত্ববাদীতার খড়গ চাপিয়ে দেওয়া যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসকে হতে হবে নিরপেক্ষ মূল্যবোধের, যাতে করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা এবং ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে ওঠার জন্য নৈতিক বিচক্ষণতা অর্জন করে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সিয়াম জে স্যাম জানান, মালবিকা কলেজে বিবিএ অধ্যয়ন অব্যাহত রাখতে চান। কিন্তু বিশাক আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান না। বিশাক কলেজে জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলো ফেরত চেয়েছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মালবিকাকে পুনরায় ভর্তি ও বিশাকের নথি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু।