ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকীর অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশটির প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। বিচারপতি শওকত আজিজ অভিযোগ করেছিলেন, সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নওয়াজকে কারাগারে রাখতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির সর্বোচ্চ আদালতকে বিচারপতি শওকত আজিজের অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে। গতকাল রোববার (২২ জুলাই) সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের একজন বিচারক দেশের বিচার বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
আইএসপিআর-র বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও পবিত্রতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টকে অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শনিবার রাওয়ালপিন্ডি জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনে বক্তব্য দেন বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী। সে সময় তিনি অভিযোগ করেন, আসন্ন নির্বাচনের সময়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়েকে কারাগারে রাখতে আইএসআই ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ আনোয়ার খান কাসির কাছে হাজির হয়েছিলেন। বিচারপতি শওকত দাবি করেন, প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়ে ওই সংস্থা বলেছে, তারা চায় না নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাইরে আসুক। তার দাবি অনুযায়ী, শওকত আজিজ সিদ্দিকীকে নওয়াজের আপিল শুনানির বেঞ্চে না যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শওকত আজিজ বলেন, আজকের যুগে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পুরোপুরিভাবে জড়িত আইএসআই। তাদের কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামত বেঞ্চ গঠন করতে পারছে। বিচারিক বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেও নিজের বক্তব্যে তার কোনও প্রমাণ দেননি তিনি।
রবিবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বিচারপতি শওকত আজিজের মন্তব্য আমলে নিয়েছেন। করাচিতে এই ঘটনার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি জানান, বিচারপতির ওই মন্তব্যে তিনি গভীর দুঃখ পেয়েছেন।
শুনানির পর প্রধান বিচারপতি পাকিস্তান ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারী কর্তপক্ষের কাছ থেকে বিচারপতি শওকত আজিজের ভাষণের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচার বিভাগ কোনও ধরনের চাপের মুখে নেই জানিয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, বিচারপতিদের আইনের প্রতি আস্থা রয়েছে এবং সংবিধান অনুসারেই কাজ করছেন।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিচারপতি শওকত আরও অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমি জানি কার বার্তা কে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের কাছ থেকে কেন নিয়ে নেওয়া হলো?’ তিনি অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে আর এখন তা ‘বন্দুকধারী ব্যক্তি’দের নিয়ন্ত্রণে। বিচারপতি শওকত সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল যদি আপনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে আপনার রায় আমাদের পক্ষে আসবে তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগগুলো শেষ করে দেওয়া হবে।’ সেপ্টেম্বর নাগাদ তাকে প্রধান বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন শওকত।
আইন বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, শওকত আজিজের মন্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হতে পারে। বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব থেকেও বরখাস্ত করা হতে পারে।
এদিকে, বিচারপতি শওকত আজিজ প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তার অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে দুটি অভিযোগ মীমাংসার অপেক্ষায় রয়েছে, যার একটি সেনাবিরোধী মন্তব্যের কারণে। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।