এক শর্তযুক্ত রায়ে কাতারের ওপর সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর আরোপিত অবরোধকে বর্ণবাদী আচরণ আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। ২০১৭ সালের জুনে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর দেশটির ওপর স্থল, নৌ ও আকাশ পথে অবরোধ আরোপ করে। আরোপিত অবরোধের বিরুদ্ধে গত মাসে জাতিসংঘের অধীন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) অভিযোগ দায়ের করে কাতার। অভিযোগ নিষ্পত্তি শেষে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে এই রায় দেওয়া হলো। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কাতার।
সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার অভিযোগে সৌদি নেতৃত্বে ১০১৭ সালের ৫ জুন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিসর, ইয়েমেন, লিবিয়া ও মালদ্বীপ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই ধারাবাহিকতায় মৌরিতানিয়া এবং সেনেগালও একই পদক্ষেপ নেয়। সংকট সমাধানে ১৩টি শর্ত দিয়ে আলোচনায় আহ্বান জানায় সৌদি আরব-আমিরাত-মিসর-বাহরাইন। কাতার শর্ত মানতে রাজি না হওয়ায় দোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা। এতে করে কাতার জল, স্থল ও আকাশপথে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গত মাসে কাতার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয়। শুনানি শেষে সোমবার ওই মামলার রায় দেয় আদালত।
আইসিজে আদালতে দায়ের করা অভিযোগে কাতারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত সে দেশের হাজার হাজার নাগরিককে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে বহিষ্কার করেছে। এদের অনেকের পরিবারের সদস্য ও সম্পদ আমিরাতে থেকে গেছে। আকাশ ও সমুদ্রপথ বন্ধ করে আমিরাত তাদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। অভিযোগে বলা হয়, এই অবরোধের কারণে সব ধরণের আন্তর্জাতিক বৈষম্য নিরসন কনভেনশন (সিইআরডি) লঙ্ঘন করা হয়েছে। কাতার ও আমিরাতের স্বাক্ষর করা ওই কনভেনশনে জাতীয়তার ভিত্তিতেও বৈষম্য করাকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অবরোধ আরোপ করা সৌদি আরব, বাহরাইন ও মিসর এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
সোমবার আইসিজে’র দেওয়া রায়ে আমিরাতের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কাতারি পরিবারের সদস্যদের পুর্নমিলনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয় আমিরাতে শিক্ষা নিতে থাকা শিক্ষার্থীদের মেয়াদ শেষ করার সুযোগ দিতে হবে অথবা শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও পড়ার সুযোগ দিতে তাদের রেকর্ড সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া কাতারি নাগরিকদের আমিরাতের অভ্যন্তরে সুবিচার পাওয়ার সুযোগ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে আইসিজে আদালতের বিচারক বলেন, ‘আমিরাতে বসবাসরত অনেক কাতারি নাগরিকদের ফেরার কোনও সম্ভাবনা ছাড়াই জোর করে তাদের বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লুলওয়া আল-খাতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিকার রক্ষার দীর্ঘ পথের এটার শুধু প্রথম পদক্ষেপ। তবে এর মাধ্যমে যেসব দেশ কাতারের অধিকার হরণকারী পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো সতর্কতা দেওয়া গেছে।’