ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালত চালু করে সরকার। উচ্চ আদালতে মামলার জট নিরসন এবং অল্প সময়ে স্বল্প খরচে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিচার প্রাপ্তিতে সুবিধা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সুফলও মিলেছে সরকারি এ উদ্যোগের। বেড়েছে সুফলভোগীর সংখ্যাও। দেশের ২৭ জেলায় ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চললেও শুধু চট্টগ্রামেই গত এক বছরে গ্রাম আদালতে বিচার পেয়েছেন ১ হাজার ২৫৬ জন বিচারপ্রার্থী। মামলা নিষ্পত্তির হার ৮৬ শতাংশ।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, সন্দ্বীপ এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছর সময়ে এসব এলাকার গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ১ হাজার ২৯৮টি। যার ১৬৩টি মামলা এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১২৯টি, আগস্টে ৯৩টি, সেপ্টেম্বরে ৭১টি, অক্টোবরে ১২৮টি, নভেম্বরে ১১২টি, ডিসেম্বরে ৯৬টি, জানুয়ারিতে ১০২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১০৩টি, মার্চে ১১৮টি, এপ্রিলে ১৫১টি, মে’তে ১১৪টি এবং জুনে ৮১টি মামলা দায়ের করা হয়।
আগের ১৯০টিসহ মোট ১ হাজার ৪৮৮টি মামলার বিপরীতে এ সময়ে বাতিল ও নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ২৫৬টি মামলা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১০৬টি, আগস্টে ১০৯টি, সেপ্টেম্বরে ৭৭টি, অক্টোবরে ৮৫টি, নভেম্বরে ৯২টি, ডিসেম্বরে ১০৭টি, জানুয়ারিতে ৮৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ১০৭টি, মার্চে ১৩৭টি, এপ্রিলে ১৭৭টি, মে’তে ১২৫টি এবং জুনে ৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।
গ্রাম আদালতের মাধ্যমে শুধু মামলা নিষ্পত্তি নয়, মিলেছে ক্ষতিপূরণও। টাকার পরিমাণে যা ২৭ লাখ ২০ হাজার ১৪৭ টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে ৫২ হাজার ৩০০ টাকা, আগস্টে ২ লাখ ৩ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা, অক্টোবরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা, নভেম্বরে ১ লাখ ২০ হাজার ৭০০ টাকা, ডিসেম্বরে ১ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ টাকা, মার্চে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা, এপ্রিলে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬০০ টাকা, মে’তে ৫ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং জুনে ৫০ হাজার ৭০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি হয় গ্রাম আদালতে। নিজ নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আবেদনকারী ও প্রতিবাদকারী মনোনিত ২ জন করে ৪ জন প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় এ আদালত।
গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে সভা আহ্বান করা হয়। সভায় আবেদনকারী ও প্রতিবাদকারী উভয় পক্ষের মধ্যে আপসের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। এতে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে এবং সহজে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ থাকায় দিনে দিনে ভরসা বাড়ছে এ আদালতে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আদালতে মামলার জট নিরসন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও দরিদ্র লোকজন যাতে দ্রুত সময়ে ন্যায়বিচার পায় এ জন্য সরকার গ্রাম আদালত চালু করেছে। এতে ইউএনডিপির সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রাম আদালতকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে চট্টগ্রামের ৮৮ জন চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ৩ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ, ৯২ জন ইউনিয়ন সচিব ও গ্রাম আদালত সহকারীকে ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ, ৪৭০ জন ওয়ার্ড মেম্বারকে ৩ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলানিউজ