সাড়ে তিন হাজারের বেশি মামলা নিয়ে হিমশিম অবস্থা অর্থঋণ আদালতের। ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। আদালত প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকের মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে ব্যাংকের মামলা দায়েরের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও সেই মামলা নিষ্পত্তির হার খুবই কম। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো খেলাপী গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা আদায় নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছে।
অর্থঋণ আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে বর্তমানে তিন হাজার ৬৮৮ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০০৩ সালে অর্থঋণ আইন জারি হওয়ার পর চট্টগ্রামে অর্থঋণ আদালত চালু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে থাকা তিন হাজার ৬৮৮ মামলার মধ্যে অর্থঋণ মামলার সংখ্যা দুই হাজার। মিস মামলা ১১২টি । অবশিষ্ট মামলাগুলো হচ্ছে জারি মামলা। এরমধ্যে ২০০৪ ও ২০০৫ সালে এ আদালতে দায়ের করা মামলাও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের পুরোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান সালেহ কার্পেটের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে সোনালী ব্যাংক। প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে সালেহ গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই মামলা করে ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখা। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়েও এ মামলা নিষ্পত্তি করা যায়নি। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী আবুল হাসান শাহাবুদ্দিন বলেন, সালেহ কার্পেটের কাছ থেকে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে ২০০৪ সালে মামলা দায়ের করে সোনালী ব্যাংক। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৩৫৪ (২০০৪)। কিন্তুএ মামলা এখনো চলমান। বর্তমানে মামলাটি জারি মামলা হিসেবে রয়েছে। জারি মামলা নম্বর ২২৯। চট্টগ্রামের অন্যতম বড় ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক ট্রেডার্স। ছিদ্দিক ট্রেডার্স ও তাদের অপর প্রতিষ্ঠান সাঈদ ফুডসের কাছ থেকে যমুনা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার প্রায় ৭০ কোটি টাকা খেলাপি পাওনা রয়েছে। এই পাওনা আদায়ে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখা। মামলা দায়েরের ৬ বছর পার হলেও সেই মামলার কোন সুরাহা হয়নি এখনো। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ের করা মামলাও বছরের পর বছর আদালতে আটকে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা প্রথমে সাক্ষীর পর্যায়ে যায়। ওই সময় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করলে মামলা আটকে যায়। এ প্রক্রিয়ায় অনেকে মামলা আটকে দেয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় মামলাটি আবারো সাক্ষীর পর্যায়ে যায়। এ অবস্থায়ও রিট পিটিশন দাখিল করে বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আটকে দেয়া হয়।
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে অর্থঋণ আদালতের মামলা পরিচালনাকারী যমুনা ব্যাংকের আইনজীবী এডভোকেট জিয়া হাবিব বলেন, চট্টগ্রামে অর্থঋণ আদালত রয়েছে মাত্র একটি। কিন্তু সেই তুলনায় মামলা দায়েরের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদন গড়ে ৪/৫টি মামলা দায়ের হয় এ আদালতে।
অর্থঋণ আদালতে কোন মামলার রায় হলে বিবাদি বা ঋণ গ্রহীতাকে ৫০ শতাংশ টাকা ট্রেজারিতে জমা দিয়ে জামিন নিতে হয়। সেই কারণে খেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট করে মামলা আটকে রাখে। এতে বছরের পর বছর মামলার নিস্পত্তি সম্ভব হয়ে উঠে না।
এছাড়া অর্থঋণ আদালতে নিয়মিত বিচারক না থাকার কারনেও সময়মতো মামলাগুলো শেষ করা যায় না। অর্থঋণ মামলার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে এডভোকেট জিয়া হাবিব বলেন, মামলায় সাজা হওয়ার পর আপিলে গেলে ৫০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হয় ট্রেজারিতে। কিন্তু হাইকোর্টে রিটে গেলে টাকা জমা দিতে হয়না। এ সুযোগটাই নিচ্ছে খেলাপী ব্যবসায়ীরা।