সুপ্রিম কোর্টে জামিন জালিয়াতির বেশ কিছু ঘটনার পর এবার বিচারপতির নাম ব্যবহার করে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মামলার রায় পক্ষে এনে দেওয়ার কথা বলে কয়েক কিস্তিতে ওই টাকা আইনজীবী আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে একটি আবেদনও জানানো হয়েছে। বার কাউন্সিল অভিযোগটি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুক্তেভোগী জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী আব্দুল কাদির খানের (উজ্জল) দীর্ঘদিনের পরিচয়। সেই পরিচয় সূত্র ধরে জয়নাল আবেদীন তার ছেলে মঞ্জুরুল আবেদীন রাসেলের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নং- ২৪/১২, ফৌজদারি আপিল নং- ৪২/১৪ হাইকোর্টের এনেক্স ৩১ নম্বর কোর্টে বিচারের জন্য আসে। ৩১ নম্বর কোর্টটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস এবং বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত।
এই কোর্টে মামলা চলাকালীন জয়নাল আবেদীনকে তার আইনজীবী আব্দুল কাদির খান বলেন, ‘অত্র কোর্টের সিনিয়র বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সে আপনার সন্তান মঞ্জুরুলকে মামলা থেকে খালাস করিয়ে দিবে। সে জন্য ৪০ লাখ টাকা লাগবে।’
এরপর থেকে মোট তিন কিস্তিতে প্রায় ৩২ লাখ টাকা জয়নাল তার আইনজীবীকে দেন। পরে গত ৭ মে সংশ্লিষ্ট মামলায় ওই কোর্ট থেকে রায় ঘোষণা করা হয়। উক্ত রায়ে রাসেলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিচারপতির নাম বলে আমার কাছ থেকে ওই আইনজীবী (আব্দুল কাদির) ৩২ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন টাকা ফেরত চাইলে দেবে না বলে জানায় এবং বলে, তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। আরও বলে, পারলে টাকা ফেরত নিয়েন।’
জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আইনজীবী ও তার ক্লার্ক সাদ্দাম জড়িত। লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণাদী আমার কাছে রয়েছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অভিযোগ করেছি। এ বিষয়ে সেখানে শুনানিতে আমি সব তথ্য-প্রমাণাদী উপস্থাপন করবো।’
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আইনজীবী আব্দুল কাদির খান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা। এমনকি এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে কোনও আবেদন করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও আমি জানি না। আমাকে এখনো বার কাউন্সিল কোনও কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়নি। আমি আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের জুনিয়র হিসেবে এখনও কাজ করছি।’
আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহকারী সচিব আফজালুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সচিব স্যার দেশের বাইরে আছেন। তবে ঘটনাটির বিষয়ে এখনো আমি জানি না। তবে আমরা কোনও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরে, এর সত্যতা যাচাই করি। যদি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আমরা অভিযুক্ত আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেই। এরপর সে নোটিশের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রয়োজনীয় ববস্থা নেই। যদি জবাব সন্তুষ্টজনক না হয় সে ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনা সংশ্লিষ্ট এক আইনজীবী জানান, ‘ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল প্রাথমিকভাবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ নিয়ে একটি মামলা বার কাউন্সিলে চলমান আছে। মামলাটির রিসিভ কপি আমাদের হাতে আছে। নিজের দোষ এড়াতেই অভিযুক্ত আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করছে।’ বাংলা ট্রিবিউন