পরকীয়া অপরাধ নয় জানিয়ে এ সংক্রান্ত দেড়শ বছরের পুরনো একটি আইন বাতিল করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি বাতিলের রায় ঘোষণা করেন বলে খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজারের।
পরকীয়া অপরাধ নয়। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে মত দিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির পরকীয়া সংক্রান্ত ৪৯৭ ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এই আইন স্বেচ্ছাচারীতার নামান্তর। নারীদের স্বাতন্ত্র্য খর্ব করে।
ইংরেজ শাসনামলে তৈরি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া একটি মামলার প্রেক্ষিতেই এই রায় দিল শীর্ষ আদালত।
১৮৬০ সালের ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি কোনও নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে এবং ওই নারীর স্বামীর অনুমতি না থাকলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। বিবাহিত নারীকে ‘অপরাধের শিকার’ বিবেচনা করে আইনে সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষকেই দোষী হিসেবে গণ্য করার বিধান ছিল।
এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করেই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীদের দাবি ছিল, ঔপনিবেশিক শাসনামলের ওই আইনে নারীদের সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করে এই আইন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে এই আইন বাতিল করা উচিত। আরও দাবি করা হয়েছে, একই অপরাধে পুরুষকে দোষী করলে নারীদেরও দোষী করতে হবে। এই মামলাতেই রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে পরকীয়া আর অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
শীর্ষ আদালত বলছে, নিছক পরকীয়া কখনও অপরাধ হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কের কারণে জীবনসঙ্গী যদি আত্মহত্যা করেন এবং আদালতে যদি তার প্রমাণ দাখিল করা যায় তবেই এটি অপরাধে প্ররোচনা হিসেবে গণ্য হবে।
রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি এএম খানউইলকর বলেন, পরকীয়া বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে। তবে এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। একই মত জানিয়ে বিচারপতি আরএফ নরিম্যানও বলেন, ৪৯৭ ধারা একটা সেকেলে আইন। এটা অসাংবিধানিক এবং এটি বাতিল করা উচিত।
পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের আর এক বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, এই ধারা নারীদের সম্ভ্রম ও আত্মসম্মানের পক্ষে ধ্বংসাত্মক। কারণ এই আইন নারীকে স্বামীর ভূমিদাস হিসেবে বিবেচনা করে। শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের একমাত্র নারী বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রাও একই মত পোষণ করেন।
তিনিও ৪৯৭ ধারাকে অসাংবিধানিক হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, বৈবাহিক সম্পর্কে স্ত্রী কখনোই স্বামীর ছায়া নন। প্রধান বিচারপতিও একই সুরে বলেছেন, নারীর ব্যক্তিগত সম্ভ্রম রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী তার প্রভূ নন। আইনগতভাবে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীকে ছোট করে দেখানোটা ভুল।
অন্যদিকে সরকারি কৌঁসুলিরা ‘বিয়ের পবিত্রতা’ রক্ষার স্বার্থে আইনটি বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন।