ড. বদরুল হাসান কচি:
২১ আগস্ট, ২০০৪। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনাটি তার একটি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷
ঐ দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ ওই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন৷ আহত হন প্রায় চার শতাধিক মানুষ৷
সভ্য জগতের অকল্পনীয় এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সেই বিচারের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪ বছর ৪৮ দিন। বহুল প্রত্যাশিত রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিলম্বিত এ রায়ে আমরা অখুশি নই। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্টও নই। এই হামলার যে প্ল্যানার বা মাস্টারমাইন্ড, তার শাস্তি হওয়া উচিত ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
বিএনপি নেতারা বড় গলায় গণতন্ত্রের কথা বলেন। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যারা আজীবন ক্ষমতার মসনদে থাকার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নেতৃত্ব শুন্য করতে চায় তাদের মুখে আর যাই হোক গণতন্ত্র মানায় না। রায়ের মধ্য দিয়ে এ কথা আজ প্রমাণিত সত্য। ২১ আগস্ট বিএনপি যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালিয়েছিল তা দেশের রাজনীতির ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায় হিসেবে বেঁচে থাকবে। আজ যে বিচারের রায় দেয়া হয়েছে সেটি কেবল দেশ নয়, উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য নজীর হয়ে থাকবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এটা একটি মেসেস- গণতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে, তর্ক বিতর্ক থাকবে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার জন্য লড়াই থাকবে কিন্তু প্রতিপক্ষকে হত্যা করা গণতন্ত্রের পরিপন্থি।
লেখক- আইনজীবী এবং সদস্য, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি, আওয়ামী লীগ।