জামায়াত-হেফাজতসহ কোনও যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের কেউ স্বতন্ত্রভাবেও যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তবে জবাবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কোনও আইন নেই।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়, জামায়াতের অনুসারী বা নেতাকর্মী কিংবা যুদ্ধাপরাদীদের উত্তরাধীকারীরা যেন কোনোভাবেই নির্বাচন করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সিইসি এ বিষয়ে বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন বাংলাদেশ নেই। পরবর্তীতে বিবেচনা করতে হবে। কেননা এ বিষয়ে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয় আছে। সরকারের অন্য আইনের বিষয়ও আছে।
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রায়ের ব্যাখ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘যেহেতু আমি বিষয়টি জানি তাই ব্যাখ্যা দিয়েছি যে জামায়াতকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেছে আদালত। তাই জামায়াতের কোনও সদস্য কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। একই সঙ্গে এ দলটির সঙ্গে জোটগতভাবে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সে দলও নির্বাচনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এই ব্যাখ্যার পর নির্বাচন কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, জঙ্গি, সন্ত্রাসী সংগঠনও যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামও যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তারা যে সন্ত্রাসী সংগঠন তা আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারবো।’
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘আমরা তিনটি দাবি জানিয়েছি। প্রথমত জামায়াতসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনও দল বা ব্যক্তি যেন নির্বাচনের সুযোগ না পায়। এজন্য প্রার্থীর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেওয়া যে তিনি কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, স্বাধীনতাবিরোধী নন, আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বা নির্বাচনের অযোগ্য কোনও দলের সদস্য নন বা সম্পৃক্ত নন।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা তাদের দাবিগুলো আমাদের জানিয়েছেন। জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আইন-কানুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা অবহিত করবো। এছাড়া আরপিও সংশোধনের বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বা জোটগতভাবে নির্বাচনের অংশ নেওয়া থেকে দূরে রাখার কোনও আইন নেই বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি তো দল নয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘যে কোনও সংগঠন আলোচনার জন্য সময় চাইলে, সিইসি সময় দিলে, আলোচনা করা যেতে পারে। তারাও তো ভোটার। ভোটাররাও তো আমাদের স্টেকহোল্ডার।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে ইসিতে ৫ দফা লিখিত দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো,
- ঝুঁকিপূর্ণ সব নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হুমকি প্রদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনা
- জামায়াতের অনুসারিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক চিহ্ন করা
- নির্বাচনের সময় মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানবিরোধী এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা
- ৭১ এর গণহত্যাকারীদের সন্তান বা পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং যারা সর্বোচ্চ আদালতের রায় অগ্রাহ্য করছে তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং
- সেনাবাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করলে তাদের অন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলেও দাবিতে জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির স্বাক্ষরিত স্মারক লিপিতে আরও জানানো হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৯২টি নির্বাচনি এলাকায় সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোটের সংখ্যা শতকরা ১২ ভাগ থেকে ৪৮ ভাগ পর্যন্ত। যার বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।