প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের মহান উদ্যোগের পাশাপাশি প্রত্যেক আইনজীবীর উচিত প্রতি মাসে অন্তত দু’একটি মামলা বিনা ফি-তে পরিচালনা করা।’
কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন আইনজীবীর জীবন কখনই মসৃণ নয়। বিভিন্ন চড়াই-উৎড়াই পেড়িয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, ধৈর্য্য, সততা, পরিশ্রম এবং নিরন্তর অধ্যয়ন।
‘প্রতিটি মামলা পরিচালনায় তার শিক্ষা, মেধা এবং বিচক্ষণতার প্রয়োগ হতে হবে। জেনে-শুনে মামলার ঘটনার বিকৃত উপস্থাপনা করা একজন আইনজীবীর কখনই উচিত নয়। সঠিক সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আইনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আদালতকে সহায়তা করা মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চকে (আদালত) সোচ্চার থাকতে হবে। সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের মহান উদ্যোগের পাশাপাশি প্রত্যেক আইনজীবীর উচিত প্রতি মাসে অন্তত দু’একটি মামলা বিনা ফি-তে পরিচালনা করা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আরো অধিক আগ্রহী হতে হবে।’
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করায় ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক আমাকে সংবর্ধনা দেয়ায় আমি অত্যন্ত অভিভূত ও উদ্বেলিত। কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। যাকে এক সময় পশ্চিমবঙ্গের আলীপুর আইনজীবী সমিতির সাথে তুলনা করা হতো।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি কুমিল্লা জেলারই সন্তান। এ মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি। এখানেই বেড়ে উঠেছি। এখানেই আমার শিক্ষা জীবনের অনেক বছর কেটেছে। এ মুহূর্তে আরো মনে পড়ছে আমার প্রিয় আইনজীবী বন্ধুদের কথা যাদের সাথে এ বারে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি।
কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন পেশা শুরু করেছেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম সৈয়দ মোস্তফা আলী, অ্যাডভোকেটের কাছেই আমার আইন পেশার হাতেখড়ি। আমি অন্যান্য যেসকল সিনিয়র আইনজীবীর সাহচর্য পেয়েছি, তাদের স্নেহ দোয়া, অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসা আজ আমাকে বিচার বিভাগের এ সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাদের এ ঋণ শোধ করার নয়। তাদের সকলের প্রতি রইল আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। সংগত কারণেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই আইনজীবী সমিতির আয়োজনে সংবর্ধিত হয়ে আমি পরম আনন্দিত ও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি।
আইন পেশার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন পেশায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। নারী আইনজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে নারী আইনজীবীদের মর্যাদা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই সিজেএম কোর্ট বিল্ডিং-এর উদ্বোধন করা হলো। এর ফলে বিচারকদের এজলাস এবং আদালত কক্ষ ভাগাভাগি করতে হবে না। জনগণ এবং আইনজীবীদের ভোগান্তি যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি আরো অধিক হারে মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারকরা যত্নশীল হবেন।
কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ কে এম সামছুল আলম।