সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আর এই ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
আজ রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন না থাকায় অফিসগামী মানুষকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক সময় পর পর দুই-একটি বিআরটিসি বাস আসলেও সেগুলো থাকে ভরা।
অন্যদিকে রিকশা-সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোও ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছে। একই অবস্থা রাইড শেয়ারভিত্তিক অ্যাপস কোম্পানি পাঠাও-উবারেরও।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফখরুল ইসলাম নামের একজন পাঠাও ব্যবহারকারী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, আমার গন্তব্যের ভাড়া ১০১ টাকা। ৬০% ডিসকাউন্ট পাওয়ার পর(আপ টু ৪০ টাকা) সেটি নির্ধারিত হয়েছে ৬১ টাকা। কিন্তু রাইড শেষে আমাকে দিতে হয়েছে ৯১ টাকা। যার মানে বাড়তি দিতে হয়েছে ৩০ টাকা। যা ৬১ টাকার ৪৯% এরও বেশি।
ফখরুল ইসলাম আরও জানান, অভিন্ন গন্তব্যের দূরত্ব বাড়িয়ে এই ডিজিটাল জালিয়াতি করছে তারা। ধর্মঘটের অন্যায় সুবিধা নিচ্ছে পাঠাও।
রাইসুল ইসলাম নামের অপর এক পাঠাও ব্যবহারকারী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি প্রতিদিন মোহাম্মদপুর থেকে বনানী যাতায়াত করি, প্রমোকোড ব্যবহার করে আমার ভাড়া আসে ৭৫-৮০ টাকা। অথচ আজ ধর্মঘটের দিন প্রমোকোড থাকার পরও আমার ভাড়া দেখাচ্ছে ১৬০ টাকা।
নাদিম আমিন নামের আরেক পাঠাও ব্যবহারকারী বলেন, প্রমোকোড থাকার পরও সূত্রাপুর থেকে বনানীর ভাড়া দেখাচ্ছে ২২০ টাকা, যেখানে একই প্রমোকোড দিয়ে আমি অন্যান্য দিন যাতায়াত করি ১৭০ বা ১৮০ টাকায়। এখান থেকে বনানীতে প্রমোকোড ছাড়াই ২৫০ টাকা ভাড়া আসে।
শুধু তাই নয়, রামপুরা- বাড্ডা লিংক রোডে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পাঠাও-উবার রাইডার অ্যাপস ছাড়া কন্টাক্টে যাত্রী বহন করছেন। পরিবহন ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে তারা বাড়তি ভাড়ায় সরাসরি যাত্রী বহন করছেন।
সাদাত পারভেজ নামের এক যাত্রী বলেন, আমি উত্তরা যাবো। অনেক সার্চ করেও রাইডার পেলাম না। সবাই কন্টাক্টে যাত্রী নিচ্ছেন। লিংক রোড থেকে বাইকে উত্তরার ভাড়া চাইছে ২৫০-৩০০ টাকা। এইভাবে গলা কাটার মানে কী? সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোতো আরো বেশি ভাড়া চাইছে।
আসিফ আলম নামের আরেক যাত্রী বলেন, রামপুরা থেকে বারিধারা যাব। পাঠাও উবারের কোনো চালক অ্যাপসে যেতে রাজি নয়, তারা মনমতো ভাড়া হাঁকিয়ে চুক্তিতে যাত্রী নিচ্ছে।
যাত্রীদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অতীতেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয়েছিল পাঠাও লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা নাবিলা মাহবুবের। সে সময় তিনি বলেন, প্রমোকোড থাকার পর ভাড়া বেশি কাটার কোনো সুযোগ নেই পারসেন্টের হিসেব করে যা আসে, গ্রাহকদের সেই অনুযায়ীই ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। তবে ইন্টারনেট কানেকশন জিপিএসের জন্য কিন্তু অনেক সময় দেখানো টাকা থেকে ভাড়া বেশি আসে। আগেও এমন প্রবলেম হয়েছে যেগুলো আমরা সলভ করেছি।
এই প্রবলেমগুলো যদি কেউ আমাদের কল সেন্টারে জানায়, আমরা সাথে সাথে সেই পরিমাণ টাকার নতুন প্রমোকোড দিয়ে দেই।
অ্যাপস ব্যবহার ছাড়া রাইড শেয়ারে যাত্রী ও চালকদের সতর্ক করে দিয়ে নাবিলা বলেন, এমন অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে মারাত্মক ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। আপনি রাইড শেয়ার করার সময় কোনো বিপদ হলে আমরা জিপিএসের মাধ্যমে আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবো, নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নিতে পারবো। কিন্তু আপনি যখন অ্যাপস ব্যবহার করবেন না তখন আমরা কিন্তু এর দায় নিতে পারবো না। তাই বিপদ এড়াতে গ্রাহকদের সতর্ক হতে হবে। আর যেসব চালক এমন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রসঙ্গত, রোববার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘন্টার এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়, যা শেষ হবে মঙ্গলবার। আর এই সময়ের মধ্যে আট দফা দাবি আদায় না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সূত্র: পরিবর্তন ডটকম