একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শিগগিরই এ প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করা হবে।
চলতি সপ্তাহে রাজধানীর ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাননান খান।
২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান। এরপর চলতি মাসের ৩০ অক্টোবর শেষ হয় সেই তদন্ত। এ মামলায় মোট ৫৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ওয়াহিদুল হক অত্যন্ত প্রভাবশালী। তদন্তকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা ছিল তার।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা, গণহত্যা চালিয়েছিলেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রোববার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় রংপুর সেনানিবাসে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ ক্যাভেলরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্টের দায়িত্বে থাকাকালে চারটি সামরিক জিপে মেশিনগান বসিয়ে গুলিবর্ষণ করেন তিনি। এতে সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় পাঁচ-ছয়শ’ স্বাধীনতাকামী বাঙালি ও সাঁওতালকে হত্যা ও গুরুতর আহত করেন অসংখ্য মানুষকে। এর পর পুড়িয়ে দেওয়া হয় ওই এলাকার বাড়িঘর। হত্যার শিকার মানুষের লাশও পেট্রোলে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয় কয়েকটি গর্তে। হত্যা-গণহত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদরের চণ্ডীবরদী গ্রামে। বাবা মৃত শামসুল হক। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশনপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে চলে আসেন পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে ফের পাকিস্তান চলে যান। সেখানে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থানের পর ১৯৭৪ সালে ফিরে আসেন দেশে।