দলের গঠনতন্ত্র থেকে ‘দণ্ডিত ব্যক্তি দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়া’ সংক্রান্ত বিধি বাদ দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু তাদের এই সংশোধনী সংবিধান সম্মত না হওয়ায়, তা গ্রহণ না করতে গত ৩১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ২১ দিন কেটে গেলেও এখনও আদেশের অনুলিপি হাতে পাননি মামলার উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। আর আদালতের আদেশ অনুযায়ী এ বিষয়ে ইসি কী ব্যবস্থা নিয়েছে তাও পরিষ্কার নয়।
রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী গণমাধ্যমকে বলেন,‘হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি এখনও আমরা হাতে পাইনি। তবে আদেশের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’
প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে বিএনপি বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে। ওই ধারায় উল্লেখ ছিল— ‘রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দণ্ডিত, দেউলিয়া, উন্মাদ বলে প্রমাণিত, সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে, কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ দলের বিশেষ কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র থেকে এই কথাগুলো উঠিয়ে দিয়ে ‘প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ৩০ বছরের কম বয়স্ক কোনও ব্যক্তি দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না’ এই অংশটুকু যোগ করে বিএনপি। এবছরের ২৮ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেন। এর পর থেকে সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা বাতিল করা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সংশোধিত এই গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে সম্প্রতি মোজাম্মেল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু ইসি তার আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায়, তিনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
হাইকোর্ট সেই রিটের শুনানি নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসির প্রতি নির্দেশ দেন। বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন ওই নির্দেশ প্রদান করে। একইসঙ্গে আবেদনটি একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসিকে সময় বেঁধে দেন আদালত।
আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় ইতোমধ্যে ২১ দিন অতিবাহিত হলেও নির্বাচন কমিশন রিটকারীর আবেদনটি এখনও নিষ্পত্তি করেনি। রিটকারীর আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্ট রিটকারীর আবেদন নিষ্পত্তি করা ছাড়াও ‘দণ্ডিত ব্যক্তিরা পদে থাকতে পারবেন না’ বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে এই বিধান বাদ দেওয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এটি সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে— ‘কোনও ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না— যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে।’
এদিকে, হাইকোর্টের আদেশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে গত ৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন জানায়— ‘আদালতের দুটি নির্দেশনা ছিল— বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করা এবং এক মাসের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করা। নির্বাচন কমিশন আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির এই সিদ্ধান্ত আবেদনকারী, বিএনপি ও আদালতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
কিন্তু আদালতের আদেশের অনুলিপি এখনও হাতে না পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি হাতে পেলে এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদেশ হাতে পাওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা, তা দলের নীতি নির্ধারকরা ঠিক করবেন।’ বাংলা ট্রিবিউন