স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেয়ায় এবং তার সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মূল শাখার ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয় বিদারক ও শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমানের ঘটনাকে বাজে দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আজ মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করছি। তখন আদালত বলেন- অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনা খুবই হৃদয় বিদারক। শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমানের ঘটনা বাজে রকমের দৃষ্টান্ত।
এ সময় আদালত ওই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট নিয়ে আসেন। আমরা বিষয়টি দেখবো।
গতকাল স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেয়ায় এবং শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শাখার অরিত্রি অধিকারী (১৫) নামে এক শিক্ষার্থী শান্তিনগরের ২৩/২৪ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সে প্রভাতী শাখার ইংলিশ ভার্সনের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, বড় মেয়ে অরিত্রি, ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা ও স্ত্রী বিউটিকে নিয়ে শান্তিনগরের একটি বাসায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফ-এর ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলাও একই স্কুলের শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার (২ ডিসেম্বর) সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। তখন আমি ও আমার স্ত্রী স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে যাই। ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, ‘মোবাইলে অরিত্রি নকল করছিল।’ আমরা এজন্য ক্ষমা চাইলে তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে পাঠান। প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়েও আমরা ক্ষমা চাই। কিন্তু প্রিন্সিপাল সদয় হননি। একপর্যায়ে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাই; কিন্তু প্রিন্সিপাল আমাদের বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি অরিত্রিকে টিসি (ছাড়পত্র) দেয়ারও নির্দেশ দেন।
তিনি আরও জানান, স্কুল থেকে বের হয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে অরিত্রি রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। বাসায় গিয়ে দরজা ভাঙে অরিত্রিকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কাঁদতে কাঁদতে দীলিপ অধিকারী বলেন, অরিত্রিকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অরিত্রিকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না।