সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনে ৪২ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কখনোই কোনো মামলা হয়নি। তাঁরা ভোটারদের নিকট মামলার ‘দাগ’ না থাকা প্রার্থী হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন। আইন পেশায় নিয়োজিত কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, মামলা থাকলেই যে প্রার্থী খারাপ আর না থাকলেই যে প্রার্থী ভালো, সেটা বলা যায় না। কারণ, অনেকের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের বিষয়টিও দেখা যায়। তবে মামলা না থাকার বিষয়টি অবশ্যই প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
সিলেটের নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেটে মোট ৬৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ১৫ জনের। যদিও তাঁরা আপিল করেছেন। প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধে কখনোই মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এ কে আবদুল মোমেন, বিএনপির ইনাম আহমদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, বাসদের (মার্ক্সবাদী) উজ্জল রায়, বাসদের প্রণব জ্যোতি পাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রেদওয়ানুল হক চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ ও স্বতন্ত্র মাওলানা নাসির উদ্দিন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে কখনোই মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, বিএনপির মো. আবরার ইলিয়াস, স্বতন্ত্র এনামুল হক সরদার ও মো. আমির উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসাইন এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা কাজী আমিন উদ্দীন।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ জনের বিরুদ্ধে কখনোই মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন বিএনপি মো. আবদুস সালাম ও আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, স্বতন্ত্র জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ও মো. আবদুল ওদুদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে কখনোই মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ, জাতীয় পার্টির আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আতাউর রহমান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনোজ কুমার সেন ও বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মো. জিল্লুর রহমান।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধেই কখনো কোনো মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার, বিএনপির মামুনুর রশীদ ও শরীফ আহমদ লস্কর, জামায়াতের ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ মতিন চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উবায়দুল্লাহ ফারুক, ইসলামী আন্দোলনের মো. নুরুল আমিন, স্বতন্ত্র আহমদ আল ওয়ালী, মো. বাহার উদ্দিন আল রাজী ও মো. শহিদ আহমদ চৌধুরী।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে কখনো মামলা হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আসআদ উদ্দিন আল মাহমুদ, স্বতন্ত্র মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া ও সেলিম উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আজমল হোসেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলা থাকা আর না-থাকাটা কোনো প্রার্থীর যোগ্যতা বা অযোগ্যতা হতে পারে না। অনেক মামলাবিহীন প্রার্থীরও নেতিবাচক কাজ থাকতে পারে, আবার মামলার শিকার অনেক প্রার্থীরও ভালো ইমেজ থাকতে পারে। তবে মামলা নেই, এটি একটি ইতিবাচক বার্তা। সূত্র : প্রথম আলো