ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পেয়েছেন অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
আজ রোববার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ এ জামিন মঞ্জুর করেন।
পল্টন থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দীন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ রিপোর্ট দাখিল না হওয়া পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম।
আবেদনে তিনি আরও বলেন, শিক্ষিকা জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হয়ে সুষ্ঠু তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারেন। অপরদিকে শিক্ষিকার আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানিতে আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর (অরিত্রি) অভিভাবককে ডাকতে বলায় উনি ডেকেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হেমায়েত হোসেন শুনানিতে বলেন, তিনি শিক্ষিকা নামের কলঙ্ক। তার জামিন নামঞ্জুর করা হোক।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাইদ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে বুধবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছে, আমার কাজ হলো কোনো মেয়ে যদি ঝামেলা করে তাহলে তার বাবা-মাকে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে দাঁড় করানো। এ ক্ষেত্রে মোবাইল পাওয়ায় আমি তাই করেছিলাম। এ ছাড়া আমার কোনো দায় নেই। অরিত্রির বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। অধ্যক্ষ আমাকে যা বলেছেন আমি তাই করেছি।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভিকারুননিসার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর পল্টন থানায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন অরিত্রির বাবা।
মামলার এজাহারে অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তার বাবা দিলীপ অধিকারী উল্লেখ করেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।