একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আগামী ১৩ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে এবার মাঠে রাখা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি সদস্য। বৈঠকের জন্য প্রস্তুতকৃত ইসির কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে নির্বাচনের পরিবেশ এবং চলমান সময়ে ও ভোট গ্রহণকালে পরিস্থিতি কেমন থাকতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সেই অনুসারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিকনির্দেশনা দেবে।
জানা গেছে, এবার শুধু ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে পুলিশের ৮০ হাজার ১৬৬, আনসার-ভিডিপির (নারী-পুরুষ) ৪ লাখ ৭০ হাজার এবং গ্রাম পুলিশের ৪০ হাজার সদস্য। এর বাইরে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ডের অবশিষ্ট সদস্যদের দিয়ে গড়া হবে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স যারা কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং অফিসার চাইলে এসব টিম ও ফোর্স ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া ভোটের আগে-পরে মোট ১০ দিন সেনাবাহিনীর পৃথক ফোর্স মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসি কর্তৃপক্ষের।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ১ জন (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন এপিসি (অস্ত্র অথবা লাঠিসহ), আনসার সদস্য ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬) এবং গ্রামপুলিশ ১ জন মিলিয়ে মোট ১৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে পুলিশ ২ জন (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন এপিসি (অস্ত্র অথবা লাঠিসহ), আনসার সদস্য ৯ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৫), গ্রামপুলিশ ১ জন, সব মিলিয়ে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ৩ জন (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন এপিসি (অস্ত্র অথবা লাঠিসহ), আনসার সদস্য ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬), গ্রামপুলিশ ১ জন মিলিয়ে ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
মেট্রোপলিটন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে থাকবে পুলিশ ৫ জন (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন এপিসি (অস্ত্র অথবা লাঠিসহ), আনসার সদস্য ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬), গ্রাম পুলিশ ১ জন, সব মিলিয়ে ১৮ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ২ জন (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার ১ জন এপিসি (অস্ত্র অথবা লাঠিসহ), আনসার সদস্য ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬), গ্রামপুলিশ ১ জন, সব মিলিয়ে ১৫ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ সদস্য থাকবেন।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি মাঠে থাকবে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩০০ সংসদীয় আসনের নির্বাচনী মাঠে নামবেন ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ভোটের পরের দুদিনসহ মোট ৪ দিন মাঠে থাকবেন। এ সময় নির্বাচনী অপরাধে অপরাধীদের সংক্ষিপ্ত বিচার করবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোট গ্রহণের দুদিন আগে থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত মোট ৪ দিন মাঠে থাকবেন। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবেন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।