শ্লীলতাহানি, যৌন নিগ্রহের শিকার যে বা যাঁরা, কোনও ভাবেই তাঁদের নাম প্রকাশ করা যাবে না বলে নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। মৃত বা জীবিত-কোনও অবস্থাতেই নিগৃহীতার পরিচয় সংবাদমাধ্যম কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রকাশ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এমনকি তাঁদের কারও নাম মিছিল-মিটিং বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রকাশ করায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাশাপাশি নিগৃহীতার সম্মান রক্ষার্থে আরও কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি মদন বি লোকুর, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তার বেঞ্চ আইনজীবী নিপুন সাক্সেনার দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার রায়ে জানিয়েছে- পুলিশ বা ফরেন্সিক কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করতে পারবে না। নিগৃহীতার অভিভাবকদের সম্মতি থাকলেও করা যাবে না। শ্লীলতাহানি বা নিগ্রহের অভিযোগকারী, বিশেষত তার বয়স যদি ১৮-র নীচে হয়, সে ক্ষেত্রে নাম প্রকাশ্যে আনা যাবে না বলে বেঞ্চ জানিয়েছে।
২০১২-র দিল্লি গণধর্ষণ মামলার প্রেক্ষিতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিপুন। অত্যাচারের ঘটনার পরে নিগৃহীতাদের বিভিন্ন সময়ে যে সামাজিক বয়কট এবং হেনস্থার শিকার হতে হয়, তা নিয়ে গভীর বেদনা প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালতও। বেঞ্চের মন্তব্য- আমাদের সমাজে নিগৃহীতাদেরই অস্পৃশ্য হিসেবে দেখা হয়, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
নিগ্রহের বিচার চেয়ে নিগৃহীতার নাম নিয়ে যে ভাবে বিভিন্ন সময়ে মিছিল-মিটিং করা হয়, তাতেও ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে- প্রতিবাদ মিছিলে যে ভাবে নিগৃহীতাদের আইকনে পরিণত করা হয়, সেটা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। মৃত কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনদের ক্ষেত্রেও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে। কোনও ভাবে কারও নাম প্রকাশ্যে আনা যাবে না। অভিভাবকদের সমর্থন থাকলেও নিগৃহীতার পরিচয় জানানো নিষিদ্ধ। তা করতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে।
এ বছরের গোড়ায় জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় আট বছরের একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় প্রবল প্রতিবাদ দেখেছে দেশ। সেই সময়ে মেয়েটির নাম-পরিচয় যে ভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংবাদমাধ্যমের জন্য বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নিগৃহীতা নিজে থেকে যোগাযোগ না করলে তাঁর সাক্ষাৎকারও নেওয়া যাবে না। বেঞ্চের বক্তব্য- টিআরপি বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ঘটনাকে মুচমুচে করে পরিবেশন করা যাবে না।
বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নিতেও বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। তার মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক জেলায় ‘ওয়ান-স্টপ’ কেন্দ্র তৈরি। যেখানে নিগৃহীতার কাউন্সেলিং করে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহযোগিতা করা হবে। এক বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফরেন্সিক ল্যাব কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার রিপোর্ট মুখবন্ধ অবস্থায় আদালতে জমা দিতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই নিগৃহীতার নাম বেরিয়ে না যায়। সূত্র – ভারতীয় সংবাদ সংস্থা