তাঁর রায় সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপরে আঘাত হেনেছে, এই অভিযোগে মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতি সুদীপ রঞ্জন সেনের অপসারণের দাবি উঠল। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। সিপিএম জানিয়েছে, বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার জন্য তারা অন্যান্য দলের সঙ্গে কথা বলবে। আপাতত সুপ্রিম কোর্ট যাতে বিচারপতি সেনকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার নির্দেশ দেয়, সেই আর্জিও এসেছে।
মেঘালয় হাইকোর্টে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সেন সম্প্রতি বলেছেন, পড়শি নানা দেশের যে সব সংখ্যালঘু মানুষ এখনও ভারতে আসেননি, তাঁরাও এ দেশে আসতে বাধ্য হলে বিনা প্রশ্নেই আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। ভারতকে অনেক আগেই ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তাঁর ওই পর্যবেক্ষণ-সহ রায়ের প্রতিলিপি তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতির আশা, তাঁর ওই মতের গুরুত্ব মোদী ও মমতা বুঝবেন। এমন রায় নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন, তার মধ্যে দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক মত ও দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে, যা আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবনাকে সমর্থন করে। আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু বিচারপতি সেন সেই কাঠামোর বিরুদ্ধে গিয়েছেন এবং তার ফলে পদে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়েছেন।’’
বিকাশবাবুর আর্জি, বিচারপতি সেনকে আপাতত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দেশের বিচারব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে সচেষ্ট হোন। তিনি জানিয়েছেন, ‘অল ইন্ডিয়া ল’ ইয়ার্স ইউনিয়ন’ সব দলের সাংসদদের কাছে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার আর্জি জানাচ্ছে।
দিল্লিতে শুক্রবার বৈঠকে আলোচনার পরে সিপিএমের পলিটব্যুরোও অভিযোগ করেছে, ‘সাম্প্রদায়িক মতামত’ এনে বিচারপতি সেন সংসদের গুরুত্ব এবং বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার অবমাননা করেছেন। তাই তাঁর অপসারণের দাবি করেছে পলিটব্যুরো। ইমপিচমেন্টের বিষয়ে অন্য দলের সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেছে তারা। বাংলার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের মতে, ‘‘বিচারপতি তাঁর সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিল, ইমপিচমেন্টের আগে এ ক্ষেত্রেও তা-ই নেওয়া উচিত।’’
মিজোরামে ১০ বছর অ্যাডভোকেট জেনারেল থাকা তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ দেবের বক্তব্য, ‘‘বিচারপতি সেন সংবিধানের উপরে আঘাত হেনেছেন। আসএসএসপন্থী কোনও মত ব্যক্তিগত ভাবে পোষণ করলেও আদালতে বসে রায়ে তা লেখা চলে না।’’
অসমের ছাত্র সংগঠন আসু এবং মেঘালয়ের জঙ্গি সংগঠন এইচএনএলসি ওই বিচারপতির পদত্যাগের দাবি করেছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা