স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১০টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০টি নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চারবার করে মোট আটবার এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি দুবার সরকার গঠন করে।
আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সংসদ তার মেয়াদকাল পূরণ করে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে। এ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে। এ নির্বাচনে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
এছাড়া প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ, চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৭৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ এবং দশম সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। বিএনপি একতরফাভাবে ২৭৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এ সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি এবং এর শরিক দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এক নজরে ১০টি সংসদের ভোটের ফলাফল :
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মোট ১৫টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন – বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৩টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাঁচজন বিজয়ী হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/মোহাম্মদ মনসুর আলী। এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর ছয় মাস।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- বিএনপি ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-মালেক ৩৯টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ দুটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-মিজান দুটি, জাসদ আটটি, মুসলিম ও ডেমোক্র্যাটিক লীগ ২০টি, ন্যাপ একটি, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট দুটি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল একটি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল একটি, জাতীয় একতা পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্র ১৬ প্রার্থী নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শাহ আজিজুর রহমান। বিরোধীদলীয় নেতা হন আসাদুজ্জামান খান।
এ সংসদের মেয়াদ ছিল তিন বছর।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। মোট ১৩টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি, কম্যুনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ পাঁচটি, ন্যাপ-মোজাফফর দুটি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাঁচটি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-রব চারটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-সিরাজ তিনটি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১০টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ চারটি, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি তিনটি এবং স্বতন্ত্র ৩২ প্রার্থী নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান চৌধুরী। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
এ সংসদের মেয়াদ ছিল ১৭ মাস।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। ফলে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। নির্বাচনে মোট ছয়টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- জাতীয় পার্টি ২৫১টি, সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, স্বতন্ত্র ২৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-সিরাজ তিনটি এবং ফ্রিডম পার্টি দুটি আসন লাভ করে।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ/কাজী জাফর আহমেদ। বিরোধীদলীয় নেতা হন আ স ম আব্দুর রব।
এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর সাত মাস।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। মোট ২১টি রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেয়।
প্রাপ্ত আসন – বিএনপি ১৪০টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল পাঁচটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ-সিরাজ একটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১৮টি, সিপিবি পাঁচটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি একটি, গণতন্ত্রী পার্টি একটি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ একটি এবং অন্যান্য দল তিনটি আসন লাভ করে।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
সংসদের মেয়াদ চার বছর আট মাস।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করায় বিএনপি ২৭৮টি আসন পেয়ে একতরফা জয়লাভ করে। মোট তিনটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- বিএনপি ২৭৮টি, ফ্রিডম পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্র ১০ প্রার্থী নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা হন বেগম খালেদা জিয়া। এ সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
মোট আটটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন – আওয়ামী লীগ ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, ইসলামী ঐক্য জোট একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তিনটি আসনে জয়ী হয়।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা হন বেগম খালেদা জিয়া।
সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান। নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। মোট ১৯টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- বিএনপি ১৯৩টি, আওয়ামী লীগ ৬২টি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১৭টি, জাতীয় পার্টি-এ-ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট ১৪টি, জাতীয় পার্টি- না-ফি চারপি, জাতীয় পার্টি-মঞ্জু একটি, ইসলামিক ঐক্যজোট দুটি, কৃষক শ্রমিক জনতালীগ একটি ও স্বতন্ত্র ছয়জন নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
সংসদের মেয়াদ হয় পাঁচ বছর।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। মোট ১০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন- আওয়ামী লীগ ২৩০টি, বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তিনটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি একটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি একটি ও স্বতন্ত্র চার প্রার্থী নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলীয় নেতা হন বেগম খালেদা জিয়া।
সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর (পূর্ণমেয়াদ)।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগসহ এর শরিকরা। মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রাপ্ত আসন (১৪৭টি)- আওয়ামী লীগ ৯৬টি, জাতীয় পার্টি ১২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি চারটি, জাসদ দুটি এবং স্বতন্ত্র ১৪ প্রার্থী নির্বাচিত হন।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের নেতা হন রওশন এরশাদ।
সংসদের মেয়াদ চলমান।