বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকদেরও স্বল্প সুদের ব্যাংকঋণ দরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে ১৮ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকার গত জুলাই থেকে স্বল্প সুদে ব্যাংকিং–ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ সুবিধা দিয়ে রেখেছে সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সুবিধাটি দেবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ ব্যাপারে নীতিমালা জারির কাজ চলছে।
তবে বিচারকদের জন্য সুবিধাটি দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে অর্থ বিভাগ এখনই কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অর্থসচিব মো. আবদুর রউফ তালুকদার গণমাধ্যমকে শুধু বলেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
অর্থ বিভাগ ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং–ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ প্রদান নীতিমালা’ জারি করে গত ৩০ জুলাই। নীতিমালায় এ ঋণ পাওয়ার জন্য ‘সরকারি কর্মচারী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গৃহঋণ তাঁরাই পাবেন, যাঁরা সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে শুধু স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইনের মাধ্যমে তৈরি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত হবেন না। সে হিসেবে নিম্ন আদালতের বিচারকেরা যে গৃহঋণের বাইরে রয়েছেন—চিঠিতে সে কথাও উল্লেখ করা হয়।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সরকারি কর্মচারী এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োজিত কর্মচারীদের ভিন্ন বেতন ও ভাতা আদেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত কর্মচারীরা জাতীয় বেতন কাঠামো-২০১৫ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পান। কিন্তু বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োজিত কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পান বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ-২০১৬ অনুযায়ী।
চিঠিতে বলা হয়, গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালাটি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঋণসুবিধা দেওয়ার জন্য প্রযোজ্য হলেও বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য কি না সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে, জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ-২০১৬–এর আওতাধীন বিচার বিভাগে নিয়োজিত কর্মচারীদের গৃহঋণ সুবিধা দেওয়া সমীচীন হবে। সার্বিক বিবেচনায় বিচারকদের গৃহনির্মাণ ঋণসুবিধা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালতে বর্তমানে ১ হাজার ৭ জনের মতো বিচারক রয়েছেন। বিচারক ছাড়া নিম্ন আদালতে কর্মরত অন্যরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মচারী।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলাল চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বাড়ি-গাড়ি করতেই বিচারকদের পুরো পেনশনের টাকা খরচ হয়ে যায়। চাকরিরত অবস্থায় স্বল্পসুদে গৃহঋণ পেলে বিচারকেরা উপকৃত হবেন।
গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি কর্মচারীরা ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যোগ্য। ঋণ পাওয়ার আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ধরা হয়েছে ৫৬ বছর। ২০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বাজারে সুদের হার যা-ই থাকুক না কেন ঋণ গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে ৫ শতাংশ সরল সুদ। সুদের বাকি অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করবে।
সরকারি কর্মচারীদের ঋণ দিতে গত অক্টোবরে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে আলাদা সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।