রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ায় নিহত শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলাকে (৫) হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলেন দুই আসামি। আসামিরা হলেন- গোলাম মোস্তফা (২৮) ও আজিজুল (৩০)।
আজ বুধবার (৯ জানুয়ারি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলম তাদের আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম জসিম উদ্দিন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ শিশু নুসরাত ও ফারিয়াকে ঘরে ডেকে নেয় গোলাম মোস্তফা। ভাই আজিজুল বাওয়ানীকে আগেই খবর দিয়ে বাসায় ডেকে আনেন তিনি। ঘরে ডেকে প্রথমে শিশু দুটিকে নিজের স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে সাজায় মোস্তফা। এরপর তারা দুইভাই মিলে ইয়াবা সেবন করে শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের চিৎকারে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ফারিয়াকে গলাটিপে হত্যা করে আজিজুল। আর নুসরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে মোস্তফা।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, শিশু দুটিকে ঘরে এনে আজিজুল ও মোস্তফা ইয়াবা সেবন করে। এরপর উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দেয়। শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে। তখন গানের শব্দ আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরও ব্যর্থ হয়ে তাদের হত্যা করা হয়। হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যায় আর মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ নিয়ে বাসায় থাকে। এক পর্যায়ে সে খাটের নিচে মরদেহ রেখে দেয়।
তিনি বলেন, মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের লোকজন টের পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মোস্তফা পালিয়ে যায়।
মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিতে কাজ করতেন।
ডিসি বলেন, শিশুরা চিৎকার করলেও উচ্চ শব্দে গান বাজানোর কারণে বাইরে কেউ শুনতে পায়নি। শিশু দুটি নার্সারিতে পড়তো। স্কুল শেষে এলাকায় দুজন ঘোরাঘুরি করছিল। এ সময় তাদেরকে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয় মোস্তফা।
ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত কি না জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মোস্তফা ফোন করে আগেই আজিজুলকে বাসায় ডেকে নেয়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। তারা একে অপরের মামাত-ফুফাত ভাই।
তিনি আরও বলেন, এটি বিকৃত মানসিকতা থেকে হচ্ছে। তাছাড়া মাদকাসক্ত এর বড় কারণ। আর যে সমস্ত জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন।
আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ ও আলামত সরবরাহ করে পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাতে ডেমরার ‘নাসিমা ভিলা’র মোস্তফার ঘর থেকে দুই শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) মরদেহ পাওয়া যায়। এদিন দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল তারা।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত নুসরাতের বাবা পলাশ হাওলাদার বাদী হয়ে এই দুইজনের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডেমরা থানা পুলিশ।