বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংক করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে সাজা দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র মেকাটি শহরের একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে তিন বছর আগে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া ওই সাইবার চুরির ঘটনায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপিন্সের আঞ্চলিক আদালত বৃহস্পতিবার এই রায়ে মুদ্রাপাচারের আট দফা অভিযোগে দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রতিটি ধারায় ৪ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সেই সঙ্গে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে তাকে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় এই প্রথমবারের মতো কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ডিগুইটো অর্থপাচারের আটটি অভিযোগে মেকাটি আঞ্চলিক বিচার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন।
চারটি অজ্ঞাত ও কাল্পনিক ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনে ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করার অপরাধে ডিগুইটো দায়ী বলে জানিয়েছেন আদালত।
তবে ২০১৬ সালের সিনেটের তদন্তের শুনানিতে ডিগুইটো বলেন, তাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। আরসিবিসি ব্যাংকের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ হলেই কেবল অর্থপাচার করা সম্ভব।
ডিগুইটোর আইনজীবী দিমেট্রিও কাস্টোডিও বলেন, তার মক্কেল রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সুপ্রিমকোর্টের চূড়ান্ত রায় স্থগিত করে তিনি মুক্তই থাকবেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ মামলা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাবে। ডিগুইটোর জন্য এটি একেবারে সাময়িক বিপত্তি।
এ রায়ের পর ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম বলেন, আরসিবিসি ব্যাংকের আরও ছয় কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের মামলা দেশটির অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি, যা বিচারকার্যকে আরও সহজ করে দেবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। এই অর্থ চুরিতে দেশের ভেতরের কোনো একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
খোয়া যাওয়া রিজার্ভের অর্থের দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হলেও এখনও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।