তিন মাস স্থগিত রাখা মামলার শুনানিতে দীর্ঘ ১৬ বছর অংশ না নেওয়ায় দুই আইনজীবীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন হাইকোর্ট। তবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাদের জরিমানা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ওই আইনজীবীদের নাম মানিক লাল আচার্য ও অ্যাডভোকেট এ বি রায় চৌধুরী।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
মামলাটির আসামি জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার বিরাজকান্তি ভৌমিকের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে চলমান মামলার ওপর জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত। এর ফলে তার বিরুদ্ধে মামলাটি চলতে আর কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে বিরাজকান্তি ভৌমিকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মানিক লাল আচার্য। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিরাজকান্তি ভৌমিকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০০৩ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। পরে হাইকোর্ট একই বছরের ৬ এপ্রিল মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন এবং মামলাটির কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তবে তিন মাস পরে তো নয়ই দীর্ঘ ১৬ বছরেও মামলাটির রুল শুনানিতে হাজির হননি মানিক লাল আচার্যসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এর ফলে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিচারিক আদালতে এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া থেকে শুরু করে নানা বাধার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে আইনজীবীদের। এ কারণেই হাইকোর্ট ওই আইনজীবীকে জরিমানা করতে চেয়েছিলেন।
আজ বুধবার দীর্ঘ ১৬ বছর পর হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি করতে আসায় আইনজীবী মানিক লাল আচার্যকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানান আদালত। তখন এই মামলায় সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ বি রায় চৌধুরী যুক্ত আছেন বলে আদালতকে অবহিত করেন মানিক লাল। তা শুনে বিচারকরা বলেন, আপনাকে ৫০ হাজার ও আপনার সিনিয়রকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এরপর আইনজীবী মানিক লাল আচার্য আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে জরিমানা করা থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির বাতিল বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করেন এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন বলেও জানান পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।
ঘটনার বিবরণী থেকে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানার এ্যাকো ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের পক্ষে জনতা ব্যাংকের বেতকা শাখা থেকে ২ হাজার ৭২০ টন আলুর বিপরীতে ৯৮ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোল্ড স্টোরেজের পক্ষে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৭ টাকা ঋণের জামানত হিসাবে রক্ষিত ১৫ হাজার ৪৭৯ বস্তা আলু আত্মসাৎ করা হয়। যা পরে তদন্ত করে তৎকালীন জেলা দুর্নীতি দমন অফিসার আর কে মজুমদার ৭ জনকে আসামি করে টংগীবাড়ী থানায় ১৯৯৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি মুন্সিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হলে তা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়।