রাজধানীর বনানীতে আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাদেম উল কায়েসের আদালত এ আদেশ দেন।
এছাড়া কারাগারে থাকা একই মামলার আসামি সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমের জামিন আবেদনও বাতিল করেছেন আদালত।
এদিন মামলার এক ভিক্টিমকে জেরা করার দিন ধার্য ছিল। আদালতে ভিক্টিমকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। তবে তাকে জেরা করা শেষে না হওয়ায় আগামী ৬ মার্চ পরবর্তী জেরার জন্য নতুন করে দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
সাফাতের আইনজীবী তার জামিন চেয়ে শুনানিতে বলেন, আসামি দীর্ঘদিন ধরে জেল হাজতে রয়েছেন। জামিন পেলে জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করবেন না। ঘটনার তারিখ রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত যে ঘটনার বর্ণনা এজাহারে দিয়েছে তার সাথে ভিকটিমের জবানবন্দিতে মিল নেই। চিকিৎসার রিপোর্টে ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ হয়নি। এ ঘটনা সাজানো, বানোয়াটভাবে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাফাতের কিডনিতে পাথর জমেছে। ডান পাশেরটা অপারেশন করা হয়েছে, বাম পাশেরটা অপারেশন করতে হবে। আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি, নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। পলাতক হওয়ার সুযোগ নেই। আর হুমকি-ধমকির বিষয় ভিত্তিহীন। আমরা তার জামিন স্থায়ী করার প্রার্থনা জানাই।
শুনানিতে বাদী পক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামি সাফাতকে মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ। তাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। তার জামিন বাতিল করা হোক। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার না। আর কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসা করা হোক।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সাফাতের জামিন বাতিল করেন এবং নাঈম আশরাফের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৬ মার্চ দিন ধার্য করেন।
জেরা করার সময় আদালতের উদ্দেশে ভিকটিম বলেন, আসামিরা একের পর জামিন পাচ্ছে। আসামিদের জন্য আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সমেস্যা হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ সময় ভিকটিম সাফাতের জামিন বাতিল এবং অপর আসামি নাঈম আশরাফের জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করেন।
ভিকটিম আদালতকে তাড়াতাড়ি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে অনুরোধ করেন। কারণ হিসাবে তিনি জানান, তিনি একটি চাকরি করেন বার বার ছুটি চাওয়া যায় না। আর যে বিষয় নিয়ে ছুটি চাইবেন সেটা সবার সামনে প্রকাশও করা যায় না।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক তরুণী।
এজাহারভুক্ত অপর চার আসামি হলেন- পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)।
৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।
১৩ জুলাই ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামি সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ (১) ধারা এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করেন একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় আসামি সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন এবং বন্ধু সাদমান সাকিব জামিন পেয়েছেন।