বয়সের সঠিক তথ্য গোপন করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ ছিল স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের (সিএমএমইউ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে। এ কারণে তার নামে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে আবেদন জানান তোজাম্মেল। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আটকে থাকা মামলার জট খোলে এ বছরের ২১ জানুয়ারি। দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলা শুনানির জন্য প্রশাসন পৃথক বেঞ্চ গঠন করায় নতুন-পুরান মিলিয়ে এমন হাজারও মামলার জট খুলতে শুরু করেছে হাইকোর্ট বিভাগের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তার পদে যোগ দেওয়ার পর দুর্নীতি ও অর্থ-আত্মসাতের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৪ জুন গঠন করেন একটি পৃথক হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চটিতে আরও আছেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
হাইকোর্টের এই বেঞ্চটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অর্থপাচার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন সংক্রান্ত সব ধরনের ফৌজদারি ও রিট মোশন, রিভিশন মামলা, আপিল মঞ্জুরির আবেদন এবং এসব মামলায় রুল, আবেদন গ্রহণ ও শুনানির জন্য।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি বাদ দিয়ে দুর্নীতির মামলা শুনতে পৃথক এই বেঞ্চটি এরইমধ্যে তাদের কার্যক্রমের প্রায় ছয় মাস সময় অতিক্রম করেছে। আর এই ছয় মাসে ৬০০ বা তার বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছে এই বেঞ্চ। হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এটি একটি নজির বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এই বেঞ্চটি গঠনের শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিযুক্ত আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদক ও অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়ে থাকে। দুর্নীতি মামলায় জামিন, বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই ফৌজদারি রিভিশন, দুদকের কোনও নোটিশের বৈধতা প্রশ্নে রিট বা আপিল মামলাও এ কোর্টে শুনানি হয়। ফলে যুগ যুগ ধরে আটকে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে বেঞ্চটি কাজ করছে। রাষ্ট্রপক্ষের পাশাপাশি দুদক আইনজীবীরাও এ কোর্টে মামলার শুনানিতে অংশ নেন। এছাড়া, প্রধান বিচারপতি বিশেষ কোনও মামলা পাঠালে সেটার ওপরও শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এই বেঞ্চে।’
এদিকে, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতেই বেঞ্চটি গঠন করা হয়েছিল। নিয়মিত এর ভালো ফলাফলও আমরা পাচ্ছি।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবীদের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চটি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে দুর্নীতির মামলা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় মাত্র একটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তিতে চাপ বেশি পড়ছে। বিচারপতিরা নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবুও ফৌজদারি আপিল, রুল ও বিবিধ মামলার শুনানি করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই আরও কয়েকটি বেঞ্চ গঠন করা হলে এসব মামলা নিষ্পত্তির পথ সুগম হবে বলে মনে করছি।’
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তিতে আরও বেঞ্চ গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ আবেদন করেননি। এ ধরনের আবেদন আসলে প্রশাসন অবশ্যই তা ভেবে দেখবে।’ বাংলাট্রিবিউন