‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। একই সঙ্গে বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতা ছিল। হাইকোর্টে দাখিল করা এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
আদালতে ২৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। এ সময় রিট আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি বলেছে, বইটি প্রণয়নের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, তথ্য-উপাত্ত, সংযোজিত ছবি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় সম্পাদনা কমিটির কাজের মধ্যে অসংগতি ছিল। এ কমিটির কাজে ধারাবাহিকতা ছিল না। নিয়মিত সভাও হতো না। তাছাড়া গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল মর্মে প্রতীয়মান হয়।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশমূলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। জাতির জনকের ঘোষিত স্বাধীনতায় সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়।
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। বিধায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান-এর মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অথবা বঙ্গবন্ধুর অন্য যেকোনো ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেত। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে না পাওয়ার যে যুক্তি উত্থাপন করা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে গত ২ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস নামক বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঘটনা তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে অর্থ সচিবকে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অর্পণ চক্রবর্তী, কামরুজ্জামান কাকন ও শুভজিৎ ব্যানার্জী।
আইনজীবী অর্পণ চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বইয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।