অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য কোথায় বেচাকেনা হবে, মদ্যপায়ীরা কোথায় বসে মদ পান করবেন, পরিবহন করতে পারবেন কি না—সেসব বিষয় স্পষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ–সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া চূড়ান্তের কাজ করেছে। শিগগিরই বিধিমালাটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকে বিধিমালাটি করে সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মুসলিম প্রহিবিশন রুল ১৯৫০ ও এক্সাইজ ম্যানুয়াল (ভল্যুম–২) ও প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে অ্যালকোহল বা মদ্যপান ও কেনাবেচার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। অস্পষ্টতা থাকায় অ্যালকোহল বা মদ্যপান ও কেনাবেচা, আমদানি–রপ্তানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিমালা হচ্ছে। তবে আগের মতোই এ দেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্য মদ অবৈধই থাকছে। কোনো মুসলমান চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া মদ বা মদ জাতীয় পানীয় পান করতে পারবেন না। চিকিৎসকের সনদ নির্ধারিত ফরমে যুক্ত করে তাঁকে আবেদন করতে হবে। অমুসলিম নাগরিকেরা কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না। তা ছাড়া মুচি, মেথর, ডোম, ঝাড়ুদার ও চা–বাগানের শ্রমিক ‘পারমিট’ নিয়ে দেশি মদ কিনতে পারবেন। ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তির কাছে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকছে।
মদ পাওয়া যাবে দুই থেকে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি তারকাযুক্ত হোটেল, পর্যটন বা কূটনৈতিক এলাকা, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব ও ডিউটি ফ্রি শপে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই–বাছাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এক থেকে সাতটি বা প্রয়োজন হলে যৌক্তিকতা দেখিয়ে তার বেশি বারের লাইসেন্স পেতে পারে। বিধিমালায় বার বলতে বোঝানো হয়েছে অনুমোদিত জায়গা বা স্থাপনা, যেখানে বিদেশি মদ বৈধভাবে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও সেবন করা যাবে। বারের মধ্যে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার, ক্লাব বার রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
নতুন করে যে বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে তা হলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শপিং সেন্টারে প্রতিষ্ঠিত ক্লাব বারে মদ কেনাবেচা ও পানের সুযোগ রাখা। সে ক্ষেত্রে ওই শপিং সেন্টারে ক্লাব থাকতে হবে এবং ক্লাবে সদস্যদের অন্তত ২০০ জনের অনুমতি থাকতে হবে।
তা ছাড়া, মদ বিক্রির সুযোগ থাকছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের মালিক, ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অফ শপ অর্থাৎ মদ যেখানে শুধু বিক্রি হবে কিন্তু খাওয়া যাবে না—এমন দোকানের যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে।
দেশে উৎপাদিত অ্যালকোহল বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারককে শুল্ক দিতে হবে না। বিধিমালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এবং এই বিধিমালার অধীনে যেসব ডিস্টিলারি বা ব্রিউয়ারির সনদ আছে, তারা বিয়ার উৎপাদন করতে পারবে, রপ্তানিও করতে পারবে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া দেশের ভেতরে বাজারজাত করার অনুমতি থাকছে না।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে প্রতিটি দেশি ও বিদেশি মদ, বিয়ার বা এ–জাতীয় মাদকদ্রব্যের বোতল, মোড়ক বা পাত্রের গায়ে ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আইনের বিধান ব্যতীত মদ্যপান দণ্ডনীয় অপরাধ’ কথাগুলো লাল কালিতে পরিষ্কারভাবে মুদ্রিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাদক বিশেষজ্ঞ এম এমদাদুল হক বলেন, আইন প্রয়োগের স্বার্থে সেটি স্পষ্ট হওয়া দরকার। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে মদপানের হার কম। এখন অ্যালকোহল বা এ–জাতীয় পানীয় পান ও কেনাবেচায় শিথিলতা দেখালে উৎপাদকেরা লাভবান হবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অ্যালকোহল বা মদপান সহজ করে দিলে মাদকের বিস্তার কমবে বলে যে প্রচার আছে, সেটা যৌক্তিক বলে মনে করেন না তিনি। প্রথম আলো