সচিব সাজিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে (নামহীন কথিত সচিবের) নামে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র কে দিয়েছেন তা তদন্ত করার জন্য দুদকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়েটি তদন্ত করে আগামী ৭ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।
এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও মো. জাকির হোসেন সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম এ আজিজ খান।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নবির উদ্দিন খানের জামিন শুনানির সময় তার আইনজীবী দুদকের সচিব স্বাক্ষরিত একখানা প্রত্যয়নপত্র (২০১৮ সালের, ৩১ জানুয়ারি তারিখ সম্বলিত দুদক স্মারক নং গ/২০৪৫/-০৩(খ)/ তদন্ত /৮০৩) জমা দেন যাতে দেখা আসামিকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। স্মারকটি দুদকের আইনজীবী চ্যালেঞ্জ করে একটি আবেদন করেন আদালতে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে জানান প্রত্যয়নপত্রটি তার মক্কেল দিয়েছে এবং তার কাছে মূল কপি আছে। তাই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামি, তদবিরকারক ও দুদকের সংশ্লিষ্ট অফিসারকে রোববার আদালতে আসতে বলা হয়। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নির্ধারিত দিনে দুদকের পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) সৈয়দ ইকবাল হোসন ও আসামি মো. নবীর উদ্দিন খান আদালতে হাজির হন।
শুনানির সময় আদালতকে দুদকের পরিচালক জানান, এই ধরনের কোনো চিঠি দুদক দেয়নি, এই ধরনের সচিবের কোনো পদও দুদকে নেই। ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ চিঠিতে কথিত সচিবের নামও নেই। চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে হলফনামা আকারে বিষয়টি আদালকে জানান।
অপরদিকে আসামি জানান, তিনি তখন জেলে ছিলেন। দুদকের কর্মকর্তা ফারজানা আহমেদ, আলতাফ হোসেন ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম তার লোককে এই কাগজ দিয়েছেন। বিনিময়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি জেলে থাকায় তার স্ত্রী ধান ও মাছ বিক্রি করে এই টাকা দেন তাদের। তিনি আদালতে টেলিফোনে বলা কথোকথনের একটি পেন ড্রাইভও আদালতে উপস্থাপন করেন।
তখন দুদক পরিচালক আদালতকে জানান, এই ধরনের ভুয়া দুদক কর্মকর্তার ইতোমধ্যে দুটি গ্যাংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি দুদকের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখবেন। আদালত তখন পেনড্রাইভ ও প্রত্যয়নপত্রের মূল কপি আদালতের কাস্টডিতে রাখেন এবং পেনড্রাইভ থেকে কথোপকথনের কপি করে দুদককে দিতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে দুদকের সচিব নামে পাঠানো চিঠি কার তা দুদকের চেয়ারম্যানকে তদন্ত করে ৭ এপ্রিলের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে দেখা যায়, সান্তাহার বাফার গুদামে গুদাম ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণামূলক ৫২৩৪২.৮০ মেট্রিক টন সার আত্মসাৎ করেন মো.নবীর উদ্দিন খান। যে সারের যার মূল্য ১৫৩,৩৬,১৩,৭৫২/৫৫ টাকা। পরে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম গত বছরের ৩১ অক্টোবর বগুড়া আদমদীঘি থানায় দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি মো.নবীর উদ্দিন খান ছাড়া অন্য আসামি হলেন মেসার্স রাজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রাশেদুল ইসলাম।