বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল :
আদালত ও ন্যায়বিচার দুটি সামর্থক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে নাই। ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন তারিখে ঘোষিত ম্যাগনা কার্টায় উল্লেখ আছে: To no one shall we sell justice, to no one shall we deny or delay it. (আমরা কারো কাছে বিচার বিক্রয় করব না, বিচার বিলম্বিত করব না বা কাউকে বিচার হতে বঞ্চিত করব না)। ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাগনা কার্টার ঘোষিত আইনের শাশ্বত নীতি আজও বিশ্বব্যাপী সকল আদালতে অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ জনগণের মায়ের ভাষা তথা মাতৃভাষা বাংলা ভাষা। সেখানে বিজাতীয় পরভাষা ইংরেজি ভাষায় রায় প্রদান বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে তাদের বিচার লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর। কেননা বিচারপ্রার্থী যদি আদালতের রায় ও আদেশ তার বোধগম্য মাতৃভাষায় না পায়, না হয়, তবে তা অবশ্যই ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
বাঙালি জনগণের টাকায় পরিচালিত বিচারালয়ের রায় ও আদেশ বাঙালির রক্তে অর্জিত মাতৃভাষা বাংলা না হয়ে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত হচ্ছে। সাধারণ জনগণ সেই রায়ের মর্মার্থ যথাযথভাবে বুঝতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে আমাদের সাধারণ জনগণকে উক্তরূপ বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায় ও আদেশ বোঝার জন্য ইংরেজি জানা লোকের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায় ও আদেশের জন্য সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। জনগণের বিচারালয়, আমাদের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো বিজাতীয় ইংরেজি ভাষা চেপে বসে আছে। অনতিবিলম্বে এই সিন্দাবাদের দৈত্যকে অপসারণ না করা গেলে জনগণের কোনো মুক্তি নেই। জনগণ তাই এই জগদ্দল পাথর তথা বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় ও আদেশ লেখার অবসান চায়।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা বাংলাদেশের জনগণের জন্য। বাংলাদেশের জনগণের ৯৮ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলে। বিচারপ্রার্থী জনগণের বোধগম্য ভাষায় আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত না হলে, বিচারব্যবস্থা জনগণের কাছে কল্যাণকর ও গ্রহণীয় হবে না। কারণ আদালত শুধু বিচারক এবং আইনজীবীদের জন্য নয়, আদালতের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে জনগণের কল্যাণের জন্য তথা জনগণের প্রয়োজন। সুতরাং সেই জনগণের বোধগম্য ভাষাতেই আদালতকে রায় প্রদান করতে হবে।
সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম’ এবং প্রস্তাবনার দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল’ সুতরাং এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে সংবিধানের ‘প্রস্তাবনা’ যেমন সমগ্র সংবিধানের দর্শন তেমনি যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ এবং প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল সেই সকল আদর্শসমূহ এবং জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের ইতিহাস হল ‘প্রস্তাবনার’ দর্শন তথা প্রস্তাবনার অংশ তথা সংবিধানের অংশ। এর থেকে কোনো বিচ্যুতি চলবে না। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা, মাতৃভাষা হবে শিক্ষার বাহন এবং আইন-আদালতের ভাষা হবে বাংলা ইত্যাদি ছিল মহান ভাষা আন্দোলনের স্লোগান, দাবি তথা আমাদের অন্যতম মহান আদর্শ, যা আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ এবং প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। রাষ্ট্রভাষা/আন্দোলনই আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সূচনা করেছিল।
রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে দুটি বিভাগ যথা নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমানে বাংলা ভাষায় তাদের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে করে আসছে। এমনকি রাষ্ট্রের অপর বিভাগ তথা বিচার বিভাগের আওতাধীন অধস্তন আদালতের বিচারকবৃন্দও বর্তমানে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ প্রদান করে আসছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের সর্বোচ্চ আদালত তথা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ এখনো সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ প্রদান করছে না। এটা আমাদের জন্য নিতান্তই গ্লানির বিষয়। যে বিভাগ তথা বিচার বিভাগ তথা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিকভাবে অন্য দুই বিভাগকে সংবিধান মোতাবেক চলার জন্য সবসময় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠান নিজেই সংবিধান মোতাবেক বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ লিখছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমানে যে সকল দরখাস্ত দাখিল হয় তার মমার্থ অনুধাবন না করে অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী তাতে স্বাক্ষর প্রদান করেন। বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য নয় এমন ভাষায় লিখিত দরখাস্ত বা জবাবে তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ অন্যায় ও অন্যায্য।
১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে লর্ড ম্যাকাউলের ব্রিটিশ সংসদে বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন যে, ‘I have travelled across the length and breadth of India and I have Not seen one person who is a beggar, who is a thief such wealth I have seen in this country, such high moral values, people of such caliber, that I do not think we would ever conquer this country unless we break the very backbone of this nation, which is her spiritual and cultural heritage and therefore, I propose that we replace her old and ancient education system, her culture, for if the Indians think that all that is foreign and English is good and greater that their own, they will lose their self-esteem, their native culture and they will become what we want them, a truly dominated nation.’ (আমি ভারতবর্ষের সমগ্র অঞ্চল ঘুরে দেখেছি কিন্তু একজন মানুষও খুঁজে পাইনি যে কিনা ভিক্ষুক, চোর। এমন সম্পদ আমি এদেশে দেখেছি। এত উচ্চমানসম্পন্ন এবং মেধাবী মানুষদেরকে আমি মনে করি না আমরা কখনও জয় করতে পারব, যতক্ষণ না আমরা এই জাতির মেরুদ- তথা তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাঙতে না পারি। সেজন্য আমি প্রস্তাব রাখছি, আমরা তাদের পুরনো শিক্ষা পদ্ধতির, সংস্কৃতির পরিবর্তন এমনভাবে করব যেন ভারতীয়রা মনে করে ইংলিশ হয় ভাল এবং তাদের থেকে উন্নত। তখন তারা তাদের নিজস্বতা হারাবে, হারাবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং তারপর তারা পরিণত হবে এমন এক জাতিতে যা আমরা চাই, সত্যিকার বশ্যতা স্বীকারকারী জাতি)।
অতঃপর ইংরেজরা আমাদের ভাষা এবং কৃষ্টির ওপর লর্ড ম্যাকাউলের পরামর্শ অনুযায়ী আঘাত করে আমাদের তথা বাংলাসহ সমগ্র ভারতবর্ষকে তাদের তাঁবেদার রাষ্ট্র বা ঔপনিবেশিক কলোনি বানাতে পেরেছিল। তারপর ২০০ বছর যাবৎ ইংরেজরা আমাদের শিখিয়েছে আমাদের প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি ও আমাদের সংস্কৃতি থেকে ইংরেজি, ইংরেজি শিক্ষা পদ্ধতি এবং সংস্কৃতি ভালো এবং অধিকতর উন্নততর। এভাবে ইংরেজরা বাংলাসহ সমস্ত ভারতবর্ষের সকল প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি এবং ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ধ্বংস করে বাংলাসহ সমস্ত ভারতবর্ষের মানুষদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। ইংরেজরা বাংলাসহ সমস্ত ভারতবর্ষের মানুষের মেরুদণ্ড এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে যে এখনো আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। স্বাধীনতা পেয়েও আমরা এখনো পরোক্ষভাবে ইংরেজদের দাসত্ব করে যাচ্ছি।
২৫০ বছর যাবৎ (১৭৭৮ থেকে ২০১৭) যে বাংলা ভাষায় আইনচর্চা ও আইন বই প্রকাশ করা হচ্ছে, সেই ভাষায় উচ্চ আদালত তথা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় ও আদেশ দেবেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি বিশ্বাস করি, এত দিনে বিচার বিভাগের সকল কাজকর্ম বাংলায় সুন্দরভাবে হতো যদি আমরা ঔপনিবেশিক মনমানসিকতা পরিহার করতে পারতাম।
১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্থির, অচঞ্চল কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক।’ অতঃপর ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, অতঃপর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পুলিশ বাহিনীর রাইফেলের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, রফিকুদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুস সালাম নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির শ্লোগান ছিল ‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু কর’, ‘মাতৃভাষা হবে শিক্ষার বাহন’, ‘আইন আদালতের ভাষা হবে বাংলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পূর্বেই ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। বাংলা ভাষার পণ্ডিতেরা পরিভাষা তৈরি করবেন তারপরে বাংলা ভাষা চালু হবে, সে হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুশি গবেষণা করুন। আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা চালু করে দেব, সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তার সংশোধন করা হবে।’
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সূচনা করেছিল। জাতির পিতা জনগণের নিকট দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন। তাই তো আমাদের সংবিধানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ; যার সংবিধান বাংলায় লেখা হয়েছে এবং যার সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রভাষা একটি এবং তা হলো বাংলা ভাষা। জন্ম হয়েছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের। সংবিধানে অনুচ্ছেদ-৩-এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কালবিলম্ব না করে বাংলায় রায় লেখার আহ্বান জানান। স্বাধীনতার তিন বছর পরও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা বাংলা থাকা সত্ত্বেও সরকারি অফিস এবং আদালতে অবাধে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষার চর্চা চলছিল দেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং বাংলা ভাষা প্রচলন সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ, ১৯৭৫ রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, গণভবন, ঢাকা সংখ্যা ৩০.১২.৭৫, সাধারণ-৭১৯/১(৪০০) ১২ই মার্চ, ১৯৭৫ সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টসহ সকল আদালতে পরভাষা তথা বিজাতীয় ভাষা তথা ইংরেজি ভাষার ব্যবহার করা হবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনকে অবমাননা, জাতীয় চার নেতার প্রতি অবমাননা, ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ শহীদের প্রতি অবমাননা, মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনের প্রতি অবমাননা, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল পরিবার তাদের আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি অবমাননা এবং সর্বোপরি ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার এবং শফিউর রহমানসহ সকল শহীদের প্রতি অবমাননা।
আসাদুজ্জামান বনাম বাংলাদেশ (৮ এএলআর ২০১৬ (২) অনুচ্ছেদ ২৯৫) মোকদ্দমায় সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় যে, “সংবিধান মোতাবেক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রভাষা একমাত্র ‘বাংলা ভাষা’।”
হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত এই যে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ মোতাবেক এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। সাংবিধানিক পদাধিকারী সকল ব্যক্তি এই মর্মে শপথ পাঠ করেন যে, তিনি এই সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন। সুতরাং সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল কর্ম শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় হবে। এর অন্যথা অর্থ সংবিধান ভঙ্গ করা। সংবিধান মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের তিনটি বিভাগ। আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। সংবিধান মোতাবেক উপর্যুক্ত তিনটি বিভাগেরই একমাত্র ভাষা ‘বাংলা ভাষা’।
শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষার প্রতি দায়িত্ব পালন করলে চলবে না। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ সকল আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের সকল আইনের ছাত্র এবং শিক্ষককেও যেমন বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে তেমনি সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীগণসহ বাংলাদেশের সকল আইনজীবীকে এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণসহ বাংলাদেশের সকল বিচারককে সকল দ্বিধা সংকোচ কাটিয়ে উঠে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ভাষার জন্য রক্ত দিতে হবে না, জীবন দিতে হবে না। ভাষার জন্য শুধু বাংলায় আইন পড়া এবং পাঠদান করতে হবে। বাংলাদেশের সকল আইনজীবী বাংলায় দরখাস্ত লিখলে এবং বাংলাদেশের সকল বিচারক বাংলায় রায় লিখলেই শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হবে। আর সেটাই হবে মাতৃভাষার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক
আরও পড়ুন :