এশিয়ার সর্ববৃহৎ বার হিসেবে পরিচিত ঢাকা আইনজীবী সমিতি (ঢাকা বার)। যেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার আইনজীবী কর্মরত। এর মধ্যে নারী আইনজীবী প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু তাদের জন্য টয়লেট আছে মাত্র চারটি। সেখানেও নেই পর্যাপ্ত পানি, টিস্যু ও সাবানের কোনো ব্যবস্থা। তাই নারী আইনজীবীদের বিশেষ মুহূর্তে বা পিরিয়ডকালীন সময়ে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। নারী আইনজীবী এবং কোর্টের নারী কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর্মস্থলে নারীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় পিরিয়ড চলাকালে অনেকে টয়লেটে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। বাধ্য হয়ে দীর্ঘক্ষণ পরে থাকতে হয় একই স্যানিটারি প্যাড। এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাদের।
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ দিনদিন বাড়ছে। তাই কর্মস্থলে নারীবান্ধব টয়লেট ব্যবস্থাপনা শুধু প্রয়োজনই নয় বরং এটা নারীদের মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়েছে। অথচ কর্মক্ষেত্রে সে ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকাবার) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা জজ কোর্টে নারী আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এর মধ্যে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন আড়াই হাজারেরও বেশি নারী। এছাড়া তাদের সঙ্গে জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন সদ্য পাস করা শিক্ষানবিশ প্রায় আট থেকে নয় শতাধিক নারী আইনজীবী। সেই সঙ্গে কোর্টের প্রশাসন ও দফতরে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নারী বিচারপ্রার্থীরাও প্রতিদিন কোর্টে আসছেন। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত টয়লেট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পানি, টিস্যু ও সাবানের ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে ঢাকা বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী শাহানারা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ২৯ হাজার আইনজীবীর বারে আমরা পাঁচ হাজার নারী। সেখানে বাথরুম খুবই কম। পাঁচ হাজার নারীর জন্য মাত্র চারটি টয়লেট। একটি কমন রুম রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পর নির্মিত ১০ তলা ভবনে একটি কমন রুম করেছি আমরা। যদিও সেখানে কোনো টয়লেট তৈরি করা হয়নি। ১০ তলা ভবনের প্রতিটি তলায় টয়লেট আছে। যা নারী-পুরুষ সবাই গণহারে ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, এসব ওয়াসরুমে (টয়লেটে) নারীদের জন্য পিরিয়ড চলাকালীন বা মাতৃত্বকালীন কোনো ব্যবস্থা তো দূরে কথা, পর্যাপ্ত পানি কিংবা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের উদ্যোগ নেয়া হয় না। সেখানে টিস্যু, সাবানসহ হাইজেনিক কোনো ব্যবস্থা নেই। মাসিক আর মাতৃত্বকালীন ব্যবস্থা তো আরও পরে।
ঢাকা দায়রা জজ আদালতের দ্রুত বিচার আদালত-৬ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিদেশে যারা কোর্ট ব্যবস্থা দেখে এসেছেন, তারা দেশের কোর্ট আঙ্গিনার টয়লেট ব্যবস্থাপনা দেখলে প্রথমেই ধাক্কা খাবেন। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। আমাদের ঢাকা বারের মূল ভবনে নারীদের জন্য একটি কমন রুম তার সঙ্গে চারটি টয়লেট, দুটি বেসিন রয়েছে। সঙ্গে একটি নামাজের জায়গা। কিন্তু টয়লেটে নেই পর্যাপ্ত পানি ও টিস্যুর ব্যবস্থা। আর নারীর বিশেষ মুহূর্তের কথা তো বাদই দিলাম। কমন রুমে বসে খাওয়া ও বিশ্রামের জায়গা হয় না। সেখানে নারীর মাসিক ও স্বাস্থ্যবান্ধব টয়লেট তো অনেক দূর। কমপক্ষে ১০টি টয়লেট থাকলে মোটামুটি চলতো।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘কোর্ট ভবনে যখন কোনো মামলার শুনানির জন্য যেতে হয়, তখন টয়লেট ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠলে দীর্ঘপথ হেঁটে আমাকে আইনজীবী সমিতি ভবনের টয়লেটে আসতে হয়। সেখান থেকে আবার কোর্ট রুম। ততক্ষণে কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়ে যায়।
‘টয়লেটের জন্য এত দূর যাওয়ার বিষয়টি সব নারী আইনজীবীর কাছেই বিরক্তিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ভবনের প্রতি তলাতে নারীদের জন্য টয়লেট থাকা প্রয়োজন। এ নিয়ে আমি নিজেও কয়েকবার ভেবেছি। অনেক নারী আইনজীবী কোর্টের টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার কাছে আপত্তি জানিয়েছেন। আমি নিজেও অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।’
সালমা হাই টুনি বলেন, ‘টয়লেট ব্যবস্থা উপযুক্ত না হওয়ায় আমাদের নারী আইনজীবীদের মধ্যে অনেকেই এখানকার টয়লেট ব্যবহার না করে বাসায় চলে যান কিংবা কম পানি খেয়ে সকাল বেলা বাসা থেকে বের হন। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হয়। এভাবে তো আর দীর্ঘদিন চলা যায় না। পিরিয়ড চলাকালে অনেক নারী আইনজীবী কোর্টে আসা থেকে বিরত থাকেন।’