মোহাম্মদ জগলুল কবির বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। এক এগারো সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়া থেকে তার মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত তরুণ এই আইনজীবীর নেত্রীর মামলার ক্ষেত্রে রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। তিনি বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাড. সাহারা খাতুনের জুনিয়র হিসাবে সর্বপ্রথম আইন পেশায় পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে মামলার প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ বর্ষের নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী এই তরুণ আইনজীবী নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের নেওয়া সাক্ষাৎকারে।
মোহাম্মদ জগলুল কবির আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন। সে থেকে আজ অবধি তরুণ এই আইনজীবী আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। বৃহত্তর ফরিদপুরের মাদারীপুর জেলার শিবচরের এই সন্তান রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াশুনা শেষে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি পাশ করেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.এম পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি বার কাউন্সিলের সনদ প্রাপ্ত হয়ে অ্যাড. সাহারা খাতুনের জুনিয়র হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন।
সর্বপ্রথম আইনি লড়াই কবে থেকে শুরু করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাড. জগলুল বলেন, এক এগারো সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই একটা বেসরকারি টেলিভিশনে আমি (সদ্য প্রাপ্ত সংবাদে) দেখতে পাই সুধাসদনে যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ভোর পৌনে পাঁচটায় আমি দেখি সুধাসদন থেকে (বর্তমান) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ বিলম্ব না করে আমি আমার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. সাহারা খাতুন আপাকে ফোন দিই, আপা প্রথম রিং হওয়ার সাথে সাথেই কল রিসিভ করেন। (বর্তমান) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারটা অবগত করার মধ্যেখানে অ্যাড. সাহারা খাতুন আপা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নেত্রীর ফোন পান এবং আমাকে ফোনটা রাখতে বলেন। আপা (অ্যাড. সাহারা খাতুন) নেত্রীর (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে কথা শেষ করে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, জগলুল আমার বাসায় এসো। আমাদের এখনই কোর্টে যেতে হবে নেত্রীকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাল বিলম্ব না করে আমি সকাল ৬ ঘটিকায় সাহারা আপার বাসায় পোঁছাই এবং ৭ ঘটিকায় আমরা কোর্টে উপস্থিত হই। ততক্ষণে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) কোর্টে নিয়ে আসা হয়েছে। তখন কোর্টে আমরা মাত্র তিনজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলাম। আমাদের সকলের প্রিয় নেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অ্যাড. সাহারা খাতুন আপা ও আমি। সেখান থেকে আমি আইনজীবী হিসেবে আইনি লড়াই শুরু করি। তারপর দীর্ঘ এগারো মাস জেল খাটার পরে তাঁকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মুক্ত করে আনতে সক্ষম হই।
সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে তরুণ আইনজীবীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহনের প্রয়োজনীয়তা জরুরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন পেশায় যারা রয়েছেন তারা দেশকে ভালো কিছু দিতে পারবেন। কারণ হল আইন প্রণেতা আইন তৈরি করেন। আর আইন প্রণেতা যদি আইনজীবী হয় তাহলে সেটা জনকল্যাণ কর আইন হবে। কেননা আইনজীবীরা জানেন জনগণের জন্য কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর হতে পারে। তাই নবীন আইনজীবী ও শিক্ষিত তরুণরা যদি রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়। আগামী দিনে রাজনৈতিক ময়দান মেধা শূন্য হয়ে পড়বে। তাই তরুণ আইনজীবী ও শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা খুবই জরুরী।
আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী তরুণ এই আইনজীবী ভোট চাইতে গেলে আইনজীবীদের ভিতর অনেক চাওয়া-পাওয়া তিনি লক্ষ্য করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল আইনজীবীরা ৩০-৩৫ বছর ওকালতি করেও সুপ্রিম কোর্টে বসার জায়গার সমস্যায় ভুগছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে সর্বপ্রথম সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করব। প্রয়োজন হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে হলেও একটা ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করব।
দ্বিতীয়ত, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব একটা মসজিদের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে নামাজের যে জায়গা রয়েছে সেখানে একজন নামাজ পড়লে অন্য জনকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় নামাজি ব্যক্তির নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে আদালতে উপস্থিত হবে এটা খুবই বিব্রতকর। তাই আমি বিজয়ী হলে কিছু গাড়ির ব্যবস্থা করার জন্য সমিতিতে প্রস্তাব উত্থাপন করব। যাতে করে আইনজীবীদের যাতায়াত সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করা যায়।
এই সময়ে তিনি জুনিয়র আইনজীবীদের জন্য বিশেষ পলিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, কীভাবে মামলা পরিচালনা করতে হবে, কীভাবে মক্কেলদের সাথে ডিল করতে হবে কিংবা কীভাবে মামলা লিখতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে নবীন আইনজীবীরা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেন না। এই ক্ষেত্রে আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ প্রথিতযশা আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের দিয়ে জুনিয়র আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে জুনিয়র আইনজীবীরা উপকৃত হবেন। নির্বাচিত হলে সমিতিতে এ ব্যাপারেও সঠিক উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করব।
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার মন্তব্য করে তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, প্রবীণরা নির্দেশনা দেবেন আর তরুণরা সেটা বাস্তবায়ন করবেন। তরুণদের বাস্তবায়নটাই সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।