বিশিষ্ট আইনজীবী আনিসুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদেও আইনমন্ত্রী ছিলেন। টানা দ্বিতীয়বারের মতো আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। মামলাজট এবং তা থেকে উত্তরণ, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে।
আপনার মন্ত্রিত্বের ৫ বছরে মামলা ২৮ লাখ থেকে ৩৫ লাখে উঠেছে। কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আনিসুল হক: মামলাজট নিরসনে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু আইনে পরিবর্তনও এনেছি। ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড এবং অলটারনেটিভ ডিসপিউট রেজল্যুশন এডিআরকে (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) গতিশীল করা হয়েছে। উপযুক্ত এডিআর নীতি আদালতকেই উদ্ভাবন করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে যে এর অনুসরণে সুফল অনেক বেশি। তা ছাড়া সব দেশেই মামলাজট আছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে আদালতই বলেন, এই মামলা আমরা নেব না। এটা নিয়ে এডিআর করুন। আমাদের দণ্ডবিধিতে যেসব মামলা আপসযোগ্য, সেসব শুধু হয়রানি করার জন্য যাতে বছরের পর বছর পড়ে না থাকে, সে জন্য আমরা প্রসিকিউশনকে বলেছি। এ নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনিও একমত যে আপসযোগ্য মামলায় আদালত যেন এ রকম একটি অবস্থান নেন। তাহলে ছোটখাটো মামলা আর আদালতে আসবে না। খুনখারাবির মামলা আর কয়টি, এ ধরনের মামলাই তো বেশি, যার বেশির ভাগই হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়।
আপনার নেওয়া ব্যবস্থাগুলো কী পরিবর্তন বয়ে এনেছে?
আনিসুল হক: আইন সংশোধনের পর গত তিন বছরে বিশেষ করে গত এক বছরে এডিআর অনেক বেশি গতি পেয়েছে। ছোট বিষয়ে আদালত জনগণকে বলছেন, এগুলো আদালতের বাইরে নিষ্পত্তিযোগ্য, আপনারা আপস করুন। আদালতের প্রতি জনগণ যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল, আর তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া বার্তা তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, আদালতের বাইরে বিরোধের সুরাহা করলে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচে। ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসকে আমরা ইউনিয়নে নিয়ে গেছি। প্রতি জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসার দিতে পেরেছি। সে কারণে সারা দেশেই এই সেবা অনেকটা চাঙা হয়ে উঠেছে।
আপনি ৩৫ লাখের কথা বলছেন, কিন্তু এর মধ্যে অনেক মামলা ঢুকে আছে, যা অকার্যকর। হাইকোর্ট বিভাগে অনেক জামিনের মামলা টিকে আছে। রুল জারি আছে, দরখাস্তকারী জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এ রকম অকার্যকর থাকা মামলার সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার হতে পারে।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রচুর মামলা। অথচ আপিল ট্রাইব্যুনাল করছেন না।
আনিসুল হক: যদি ট্রাইব্যুনাল আইনে একটি সংশোধনী আনি, তাহলে ৫ থেকে ৭ লাখ মামলা কমে যাবে। কারও খতিয়ানে বা অন্যবিধ কারণে একটু সংশোধনী লাগবে—এগুলোও মামলা হিসেবে নথিভুক্ত আছে। প্রতি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল আছে। আমরা যদি এখন এই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ও যুগ্ম জেলা জজকে দিই, তাহলে সুরাহার হার বেড়ে যাবে।
পাঁচটি বছর মন্ত্রিত্বে থেকেও এটা করতে কেন ব্যর্থ হলেন?
আনিসুল হক: যে কেউ এই প্রশ্ন তুলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এ-সংক্রান্ত আইনটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের। তিন বছর আগে আইন সংশোধনে তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠাই। এরপর তাদের সঙ্গে ১৫টি সভা করেছি। ভূমি সচিব হিসেবে যিনি সম্প্রতি অবসরে গেলেন, ফাইলটি দুই বছর আটকে রেখেছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বলেছি, এমনকি মন্ত্রিসভায় তুলেছি। সম্প্রতি নতুন ভূমিমন্ত্রীকে বলেছি। এবার শিগগিরই আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদে আমরা সুরাহা করব।
অনেক আইনের সংশোধনীর পরও পরিবর্তন আনতে পারেননি।
আনিসুল হক: পিকিউনারি জুরিসডিকশনস বা আর্থিক এখতিয়ার-সংক্রান্ত মামলার কথা বলছেন তো? জমির কাঠা ৫ লাখ টাকা, এটা তো কোনো ব্যাপারই নয়। অথচ জমি বা মামলার বিষয়বস্তুর দাম ২ লাখ টাকার বেশি হলে সহকারী ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতগুলোর তা শুনানি করার এখতিয়ার নেই। তাই সব মামলা চলে যায় হাইকোর্টে। আমরা এখানে আইনে সংশোধন আনলাম, যাতে নিম্ন আদালত ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক এখতিয়ারের মামলা নিতে পারেন। কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তা পছন্দ করেননি। নিজে উদ্যোগী হয়ে রিট করিয়ে সেই প্রক্রিয়া আটকে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালত উভয়ে যথাযথভাবে এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন। তবে প্রতিদিনই মামলা হয়, তাই যে ৭ লাখ কমাব, সেটা পূরণ হতে হয়তো সময় লাগবে না। সেটা ঠিক রাখতে আমরা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে কথা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিচারক সংখ্যা বাড়াব। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিচারক নিয়োগে গতি এনেছেন। ১২তম ব্যাচে ৫০ জনের স্থানে একত্রে আরও ৫০ জন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরে আমরা আরও ১০০ জন নেওয়ার চাহিদা দিয়েছি।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ১৯৬০ সালের একটি অপ্রচলিত আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো অনধিক দুই বছরের দণ্ডিত অপরাধীদের কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর নির্দেশনা জারি করেছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আনিসুল হক: আমি দারুণভাবে স্বাগত জানাই। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথম একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে একবার অপরাধ করলে প্রবেশন, দ্বিতীয়বার করলে জেল—বিষয়টি সমাজকে একটু বুঝতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের বেশির ভাগ গ্রামে থাকেন। তাঁদের সেটা জানানো ও বোঝানো গেলে প্রবেশনে আমরা একটা অগ্রগতি পাব। মানুষ এটা জানলেই গ্রহণ করবেন।
এই আইন বলছে, এমনকি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত নারী প্রবেশনে মুক্ত জীবন ভোগ করতে পারেন।
আনিসুল হক: আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারা জামিন পেতে নারীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। নারীকে এই সুবিধা আমরা সব সময় দিয়ে থাকি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এটা সব সময় দেবে।
এ প্রসঙ্গে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নারীর কথা কি আপনার মনে পড়ছে? তিনি এই সুবিধা পেলে আপনি কি খুশি হবেন?
আনিসুল হক: একজন সাধারণ মানুষ অন্যায় করলে সেটা সমাজে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করে না। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এতিমের টাকা চুরি করেন, ট্রাস্টের টাকা চুরি করেন, তখন রাষ্ট্র যদি তাঁকে সঠিকভাবে সাজা না দেয়, তখন কিন্তু দেশ ও সমাজের ওপর এর একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। প্রধানমন্ত্রী থাকতে তাঁর ওপর জনগণ যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিল, তিনি তার সঠিক প্রতিফলন দেখাতে পারেননি। এখন তিনি যদি ক্ষমা চান, তখন রাষ্ট্রপতি কী করবেন, সেটা তাঁর বিষয়।
ই-জুডিশিয়ারিতে কী অগ্রগতি?
আনিসুল হক: এ বিষয়ে প্রাক্-একনেক হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে এটা একনেকে যাবে। আপনি ঘরে বসেই আদালতকে আরগুমেন্ট দেবেন। জেলে বসেই কয়েদি তাঁর আপিল দেবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মোবাইল ফোন দিয়ে সাফল্য এনেছেন। অনলাইন কী করে মানুষ নিচ্ছে। সেভাবে ই-জুডিশিয়ারি মানুষ লুফে নেবে।
আপনি বলেছিলেন, স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠন এবং পিপিদের চাকরির শর্তাবলিতে পরিবর্তন আনবেন।
আনিসুল হক: এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনেক দূর এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা যেটা দিয়েছেন সেটা হলো, স্বাধীন প্রসিকিউশন টিমে সদস্য নিয়োগে আমরা বিদ্যমান নিয়ম পাল্টে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পিপি নিয়োগ করব। পিপিদের ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকার নিচে হবে না। মফস্বলের একজন আইনজীবীর জন্য এই অর্থ অপ্রতুল নয়।
সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চেয়েছিলেন।
আনিসুল হক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালেই হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের কথা সংবিধানে লিখেছিলেন। প্রধান বিচারপতি প্রয়োজন অনুযায়ী এটা করতে পারেন। আর আইন মন্ত্রণালয় নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে এ ক্ষেত্রেও একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। অবশ্য ১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে মূল সংবিধান শুধরে যে স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা ভালো নয়। কারণ, তাতে দুর্নীতি বেড়েছিল।
অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ করতে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব পাঠায়, যা কার্যকারিতা পায়নি।
আনিসুল হক: এটা সংবিধানে আছে। তাই প্রয়োজনে আমরা নিশ্চয়ই কাজে লাগাব।
বিচারাঙ্গনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবিলায় আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নেবেন?
আনিসুল হক: এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে যা দরকার সব পদক্ষেপই নেওয়া হবে। সব থেকে বড় যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটা হলো ই-জুডিশিয়ারি চালু করা। অনিয়ম রোধে এটা বিরাট রক্ষাকবচ হবে। আগামী বাজেটের পরপরই এটা চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা রাখি।
বিচারপতি নিয়োগ আইন প্রণয়নে আপনার প্রতিশ্রুতির কী হলো?
আনিসুল হক: আইনটা প্রক্রিয়াধীন আছে। যদিও এ রকম আইনের মাধ্যমে সব সময় খুব সুফল মেলে তা-ও নয়। আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তার আলোকে অসুবিধাগুলো যাতে দূর করতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে। এই আইনটা আমি খুব শিগগিরই সংসদে নিয়ে যাব।
সংবিধানের বিতর্কিত ১৬তম সংশোধনীর একটি সুরাহা হওয়া উচিত। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সঙ্গে শুধু বিচারপতি নয়, সব সাংবিধানিক পদধারীর জবাবদিহির প্রশ্ন যখন জড়িত…
আনিসুল হক: ইনশা আল্লাহ এর সুরাহা হবে। আপনি আমার একটি অবস্থান সম্পর্কে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল। সেটা হলো, আমি সাব-জুডিস বিষয়ে কথা বলি না। আমি আশাবাদী যে বিষয়টির শিগগির একটা নিষ্পত্তি হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বাজেট বাড়ানো হবে কি না। সহকারী জজ ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজদের সাঁটলিপিকার দিলে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ত।
আনিসুল হক: দরকার হলে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে। আর লোকবল বাড়াতে যেটি বলছেন, সেটিও আমরা বিবেচনা করব।
জামায়াতের বিচার কবে, কীভাবে হবে?
আনিসুল হক: জামায়াতের বিচারের জন্য আইনের দরকারি সংশোধনী আপনারা কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন। এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উঠছে।
এটা কি আমরা ২৬ মার্চের আগে আশা করতে পারি?
আনিসুল হক: হয়তো হতে পারে। ২৬ মার্চের আগে হতে পারে না, সেটা আমি নাকচ করব না।
জামায়াতের বিচার ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে তাকে নিষিদ্ধ করা দুটি আলাদা বিষয়, আগে কোনটি?
আনিসুল হক: আমি সব সময় বলেছি, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে জামায়াতের বিচার করা যায়। বাহাত্তরের সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় এই শর্ত লেখা ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে থাকবে না। সে কারণেই জামায়াত স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ হয়। তাহলে ’৭৩-এ যে আইন করা হলো, তাতে জামায়াত নিষিদ্ধের কথা থাকতে পারে না। কিন্তু পরে (জিয়াউর রহমান) যখন সেটা ভন্ডুল করে জামায়াতকে চালু করা হলো, তখন থেকেই তার বিচারের প্রশ্ন এল। এখন জামায়াতের বিলুপ্তি ঘটলেও একাত্তরের অপরাধের জন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
কোনটা আগে ঘটছে, বিচার না বিলুপ্তি?
আনিসুল হক: বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে না। কিন্তু যদি ১৯৭৩ সালের আইন সংশোধন করা হয়, তাহলে সেই আইনের অধীনে জামায়াত দোষী সাব্যস্ত হলে তখন শাস্তি হিসেবে তাকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
তাহলে ট্রাইব্যুনাল এটা পারবেন? প্রসিকিউটররা শাস্তি হিসেবে এটা দাবি করবেন?
আনিসুল হক: হ্যাঁ। জামায়াত তো একটি রাজনৈতিক দল। তার ফাঁসি চাওয়া যাবে না। তাকে যদি সাজা দিতে হয় তাহলে বলতে হবে জামায়াত সর্বকালের জন্য বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।
একাত্তরের ডিসেম্বরে মুজিবনগর সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। সেই আদেশ নির্দিষ্টভাবে কখনো উল্টে যায়নি।
আনিসুল হক: এটা খতিয়ে দেখতে পারি, এখনো বিবেচনায় নিইনি। বাহাত্তরে যখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো, জামায়াত নিষিদ্ধ হলো। এরপর সেই আদেশের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার কথা। এরপর জিয়াউর রহমান সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনেন, এরপর কি এটাই বোঝায় না যে জিয়া একাত্তরের আদেশটি উপেক্ষা করেছেন? তার মানে কি এই নয় যে তাঁর সরকার জামায়াতকে রাজনীতি করতে দিয়ে সেই আদেশ রদ করেছে? আপনি যদি আইনের ধারাবাহিকতায় আলোচনা করেন—
আপনার কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু এটা তর্কসাপেক্ষ—
আনিসুল হক: ব্যাখ্যা দিতে গেলে কিন্তু এটাই আসবে যে সর্বশেষ আইন আগের আইনকে অকার্যকর করে দেয়। জামায়াতের নিবন্ধনের একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে। আমরা এখন দলটিকে বিচারের আওতায় আনতে চাই।
আপনি কি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে অখ্যাত আসামিদের ভিড় দেখছেন না? আপনার কি মনে হয় না যে আসামি করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভুলত্রুটি হয়েছে?
আনিসুল হক: আপনি তো পরিষ্কার করে বলছেন না যে ইস্যুটি কী?
সংবাদমাধ্যম বলছে, তাঁরা গায়েবি মামলার আসামি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এসব…
আনিসুল হক: আমি দেখেছি। কিছু ভুল হয়েছে। আমার মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব দেখছে। অনেক মামলায় আগে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করার যে মামলাগুলো ছিল, সেগুলোতে এখন অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে। যেখানে ভুল হয়েছে সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধরে নেওয়া হচ্ছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা…
আনিসুল হক: বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাকে স্বাধীন রাখতে এই সরকার যা যা করণীয়, তাই করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সংবিধানে যে আইনের শাসন এবং স্বল্প খরচে ন্যায়বিচারের কথা বলে গেছেন, আমাদের তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তাই মানুষের দোরগোড়ায় বিচার সেবা পৌঁছাতে কী কী করণীয়, সেটা নির্ধারণে আমরা ব্যস্ত।
সূত্র : প্রথম আলো, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।