সম্প্রতি আইনজীবীদের সরকারি পেনশন সুবিধার আওতায় আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক; এবং তিনি শুনানিও করেন। রিটে স্বাক্ষরকারী আইনজীবী হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ কামরুল হাসান, শেখ ফারুক হোসেন, সাকিব মাবুদ ও সাহাবুদ্দীন খান লার্জ। গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আইনজীবীদের বেনাভোলেন্ট ফান্ড (আইনজীবীদের কল্যাণ তহবিল) বৃদ্ধির জন্য এককালীন অর্থ প্রদান, মৃত্যুকালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সরকারি পেনশনের আওতায় আনয়নে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আইনজীবীদের পেনশনের আওতায় আনতে আদালতে কি কি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং কেন আইনজীবীদের পেনশনের আওতায় আনা উচিৎ সেসব বিষয়ে কথা বলতে অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দীন খান লার্জের মুখোমুখি হয়েছিল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সহকারী সম্পাদক কাজি ফয়জুর রহমান।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আইনজীবীদের পেনশনের আওতায় আনতে আদালতে কি কি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে?
অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দীন খান লার্জ : সরকার সংবিধানের অধীনে প্রজাতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারীদের মৌলিক অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার করেছে। অথচ আইনজীবীদের অবসরের পরে কোনো নগদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। এমনকি সরকারের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি থেকেও আইনজীবীরা বঞ্চিত। অথচ রাষ্ট্রের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা গ্রাচুইটি হিসেবে এবং আজীবন প্রিমিয়াম বোনাস পাচ্ছেন। কিন্তু আইনজীবীরা সব ক্ষেত্রে অবহেলিত এবং তাদের ন্যূনতম স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। মূলত এসব যুক্তিতে আইনজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আইনজীবীদের কেন পেনশন দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?
অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দীন খান লার্জ : দেখুন, আইনজীবীরা বিভিন্নভাবে উপেক্ষিত। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তিন দফা পরীক্ষার মাধ্যমে এ পেশায় অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, এরপর এ পেশায় থিতু হওয়া সময় সাপেক্ষ। আইনজীবীরাও তো মানুষ, তাদের পরিবার পরিজন আছে। যেহেতু আইনজীবীদের সুনির্দ্দিষ্ট বেতন নেই সেহেতু তাদেরকে একটা অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। একজন আইনজীবী অসুস্থ থাকতে পারেন তখন তাঁর আয়ের উৎস কি? এছাড়া শুধু সুপ্রিম কোর্টের কথাই যদি বলি, সুপ্রিম কোর্ট বছরে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকে, কোর্ট যদি বন্ধ থাকে আইনজীবীর আয় আসবে কি করে? এই ছয়মাস আইনজীবীদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা কে করবে? দেশের সর্বোচ্চ আদালত আইনজীবীদের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে কিন্তু মর্যাদা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা কি আইনজীবীরা পাচ্ছেন? পেশা আইনজীবী হলে ব্যাংকও লোন দিতে চান না। এসব কিছু বিবেচনা করে আমার মনে হয় আইনজীবীদের সরকারি পেনশনের আওতায় আনা হলে তারা পেশার প্রতি আরও উৎসাহী হবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার আইনজীবীদের নানা সুবিধা দিয়ে থাকেন কেবল আমাদের দেশেই এসকল সুবিধা অনুপস্থিত। সব আইনজীবীদের না হোক অন্তত প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ারদের সরকার চাইলেই পেনশনের আওতায় আনতে পারেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : অনেকেই বলছেন আইন পেশা স্বাধীন, সরকারি চাকরির মতো এখানে অবসরের বয়সসীমাও নির্ধারিত নয় তাহলে আইনজীবীদের পেনশনের আওতায় কেন আনা হবে, এ প্রসঙ্গে আপনার ব্যাখ্যা কি?
অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দীন খান লার্জ : দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইনজীবীদের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। আইনজীবীরা পেশাগত দায়িত্বের বাহিরেও দেশের জন্য, জনস্বার্থে কাজ করে থাকেন। সুতরাং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত না হলেও দেশের জন্য কাজ কিন্তু করে যাচ্ছেন। অথচ সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া আমাদের সংবিধানে কিন্তু পেশার বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ফলে কেবলমাত্র বয়সের দোহাই দিয়ে আইনজীবীদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী। সরকার চাইলেই আইনজীবীদের পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দিতে পারেন। মূলত সরকারের স্বদিচ্ছাই আইনজীবীদের এসব সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য যথেষ্ট। তবু সরকার যদি মনে করেন আইনজীবীদের পেশাগত যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণ করবেন এবং আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে সুনির্দ্দিষ্ট নির্দেশনা দেবেন, তাতেও আমার আপত্তি নেই। আমি চাই এই সংকট নিরসনে একটা গাইডলাইন হোক।