দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমের জীবনে ঘটে যাওয়া কষ্টের কাহিনী নিয়ে সিনেমা তৈরির প্রতি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থাটি।
আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
তিনি বলেন, ‘জাহালমের মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। এ অবস্থায় তার জীবন কাহিনী নিয়ে সিনেমা তৈরি করলে মামলার বিচার কাজে ও তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তির আগে দুদকের পক্ষ থেকে সিনেমা তৈরির উদ্যোগের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছি আমরা।’
এর আগে গত ১৩ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে জাহালমকে নিয়ে সিনেমা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মামলার আসামি হলেন আবু সালেক নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে ২৬টি মামলায় আসামি করা হয়। দুদকের মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। তিন বছর কারাভোগ করে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
টাঙ্গাইলের আলোচিত সেই জাহালমের জীবনের গল্প এবার পর্দায় আসছে। তার কষ্টের কাহিনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মারিয়া তুষার। এরই মধ্যে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে নাম নিবন্ধন করেছেন। জাহালমের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ছবির নামও রেখেছেন ‘জাহালম’। ছবিতে জাহালমের চরিত্রে অভিনয় করবেন রিয়াজুল রিজু, যিনি ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ নামের একটি সিনেমা বানিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ।
জাহালমের জীবনী নিয়ে ছবি নির্মাণের ভাবনা প্রসঙ্গে মারিয়া তুষার বলেন, ‘টেলিভিশনে প্রথম জাহালমের খবরটি জানতে পারি। তার দুঃখের জীবনের সংবাদটা ছিল সাড়া জাগানো। সেই সাক্ষাৎকার দেখার পর মনে হলো, এটা নিয়ে কাজ করা উচিত। আমার কাছে ব্যাপারটা স্পর্শকাতরও মনে হয়েছে।’
জাহালমের জীবনী নিয়ে ছবি বানাতে এ মাসেই তার (জাহালম) সঙ্গে দেখা করবেন উল্লেখ করে মারিয়া তুষার বলেন, ‘এই ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। তারপরও সাধ্যমতো চেষ্টা করব।
এদিকে নিজের জীবনের ঘটনা নিয়ে সিনেমা নির্মিত হতে যাচ্ছে জেনে খুবই খুশি জাহালম।
উল্লেখ্য গত ২৮ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি করে জাহালমকে ২৬ মামলায় অব্যাহতি দিয়ে ওই দিনই মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেদিনই তিনি মুক্তি পান।