আমরা দেশটাকে যেভাবে সাজাতে চাই সেভাবে পারিনা। আমার কষ্টের জায়গা সবচাইতে বেশি যখন দেখি কোনও মানুষ তদবির করে টাকা উপার্জন করে। যেমন বিচারক ও আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগন একদিকে যেমন ঘুষ নিচ্ছেন আর অপরদিকে দিচ্ছেন। এইভাবেই বাংলাদেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ মোতাহার হোসেন সাজু খুব কষ্টের সাথে বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের নেওয়া বিশেষ এই সাক্ষাৎকারে। ধারাবাহিক এই সাক্ষাৎকারের আজ দ্বিতীয় পর্ব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রাপ্তি আছে অনেক, পাশাপাশি অনেক অপ্রাপ্তির কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে উচ্চ আদালতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আপনার কোন হতাশা আছে?
মোঃ মোতাহার হোসেন : পেশাগত জীবনে প্রত্যেকের আবেগ-আপ্লুত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। আমরা দেশটাকে যেভাবে সাজাতে চাই সেভাবে পারিনা। আমার কষ্টের জায়গা সবচাইতে বেশি যখন দেখি কোনও মানুষ তদবির করে টাকা উপার্জন করে। যেমন বিচারক ও আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগন একদিকে যেমন ঘুষ নিচ্ছেন আর অপরদিকে দিচ্ছেন। অর্থাৎ একজন যখন অন্যের বিচার অর্থ দিয়ে তার পক্ষে কিনে নেয় এতে অপরজন ক্ষতিগস্ত হয়। এই জায়গা হতে যতক্ষণ আমরা বেরিয়ে আসতে না পারবো ততক্ষণ এটা আমার গভীর কষ্টের কারন হয়ে থাকবে। চাই এমন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে বিচার চলবে তার নিজস্ব গতিতে। যেখানে বিচারক কিংবা বিচারপ্রার্থী অথবা তার পক্ষের কোনও আইনজীবী চেয়ে থাকবে না একটা সুযোগের অপেক্ষায়।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : নবীন আইনজীবীরা আদালতে এসে অনেকটা হাবুডুবু খায়, এদের প্রতি আপনার কিছু পরামর্শ যদি বলতেন…
মোঃ মোতাহার হোসেন : তরুন আইনজীবীরা প্রথমেই এসে নিজেরা মামলা পরিচালনা করতে চায় কিংবা করে তার জন্য সঠিক কোনও প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজনবোধ করেন না। এর একমাত্র কারন তারা অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই আমি বলবো অর্থের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করলে নবীন আইনজীবীরা একদিকে যেমন ভুল ভাবে মামলা উপস্থাপনের জন্য আদালতে অপমানিত হবেন না তেমনি একজন আইনজীবীর বিচারকের প্রতি আর বিচারক আইনজীবীদের প্রতি একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। আমাদের তরুন আইনজীবীদের সে চেষ্টাই করা উচিত। আর এই আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে পারলেই তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : জেনেছি ঢাকা শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য আপনি, সেক্ষেত্রে দেশে স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষায় আইনের ঘাটতি রয়েছে এই অভিযোগের সাথে কি আপনি একমত?
মোঃ মোতাহার হোসেন : দেশে স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষায় যদিও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে পাশাপাশি এখনো স্বাস্থ্য সেবায় আইনের যে সকল ঘাটতি রয়েছে তা নিরসনে আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগের একটি অধ্যাদেশ মোতাবেক যেভাবে সরকারী, বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলতো এবং ইচ্ছেমত চিকিৎসা ফি, বিভিন্ন মেডিকেল পরিক্ষার মূল্য তালিকা নেওয়া হত। তা নিরসনকল্পে জনস্বার্থে দায়েরকৃত মামলায় উচ্চ আদালত একটা রুল দিয়েছেন। অর্থাৎ ৮২ সালের অধ্যাদেশ মোতাবেক ডাক্তারের কত ফিস? ক্লিনিকের কত চার্জ? ডায়াগনস্টিক ট্রেস্টের দামের মুল্য তালিকা নির্ধারণ ইত্যাদি মিলিয়েই উক্ত রুলের নির্দেশনাটি। এই ডিজিটাল মূল্য তালিকা সব হাসপাতালে সমন্বনিতভাবে চালু হলে চিকিৎসাখাতে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : পেশার পাশাপাশি আপনি মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত; বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন; নেতৃত্বের বড় পর্যায়ে আছেন। আইন এবং রাজনীতির সম্পর্ক কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মোঃ মোতাহার হোসেন : বর্তমান দায়িত্বের আগে আমি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক আইন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সে সুবাদে আমার পেশার সাথে একটা মিল ছিল। এ ছাড়া আমি পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। সার্বিকভাবে যেকোনো মুহূর্তে কোনো আইনি সমস্যার সম্মুখীন হলে আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ-সম্পাদক হারুন অর রশিদ সহ যারা কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন তারা আমার সাথে সময়ে সময়ে আলোচনা করেন। আমি মনে করি আমার উক্ত পেশায় থেকেও রাজনীতিতে ব্যাপক সুযোগ পাই দেশের হয়ে কাজ করার। যেহেতু আমি আইন পেশায় রয়েছি তাই তারাও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হলে আমার সাথে আলোচনা করেন। প্রচণ্ড দুঃসময়েও (এক এগারোর সময়কাল) আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী পরিষদের সিনিয়র সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি মানিকগঞ্জ সমিতির ঢাকার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেক্ষেত্রে পেশাজীবী ও সামাজিক এমন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা কেবল আত্মতৃপ্তি নাকি সামাজিক দায়বদ্ধতা?
মোঃ মোতাহার হোসেন : এখানে আত্মতৃপ্তি তো রয়েছেই তার থেকে বেশী হল সামাজিক দায়বদ্ধতা। ৬৭ বছর আগে গঠিত মানিকগঞ্জ সমিতি ঢাকার তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। এর পেছনে সকলের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা আমি ধরে রাখতে পেরেছি বলেই সকল সদস্যরা আমাকে তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
(চলবে…)