অর্চি উইলিয়ামস। বয়স ৫৮। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় ব্যাটন রাগে এক নারীকে ধর্ষণ এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে ৩৬ বছর কারাভোগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পান তিনি। কিন্তু ৩৬ বছর পর প্রমাণ হলো যে ওই অপরাধে উইলিয়ামস জড়িতই ছিলেন না।
২২ বছর বয়সে এক শ্রেতাঙ্গ হামলাকারীর সঙ্গে অর্চি উইলিয়ামসের চেহারায় কিছুটা মিল পাওয়ায় তাকে ওই ধষর্ণের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি মুক্তি না নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে একের পর এক লড়াই চালিয়ে গেছেন। অথচ যে খুনের ঘটনার জন্য অর্চি উইলিয়ামসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, সে সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে দুই মাইল দূরে তার বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার ব্যাটল রাগের ওই খুনের ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক স্টিফেন ফোর্বসের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। এবং তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে নিশ্চিত হয় যে এ ঘটনায় উইলিয়ামস জড়িত ছিলেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ধর্ষণের আলামতগুলো এবং সিঙ্গাপুরের ওই নাগরিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করে অবশেষে নিশ্চিত হন ওই খুনের ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। কিন্তু প্রসিকিউটররা এ ঘটনার তথ্য-আলামত প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তারা দাবি করেছেন, এফবিআইয়ের বিষয়টি অনুসন্ধান করার কোনো এখতিয়ার নেই।
জুডিশিয়াল জেলা কোর্টের কমিশনার কিনসিয়ুমকি কিমবলের এ মাসের শেষ নাগাদ খুনের এ ঘটনার সত্য প্রকাশের জন্য মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছে। তবে এ ঘটনায় উইলিয়ামস রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইস্ট ব্যাটন রুজ জেলা অ্যাটর্নি হিলারি মুর বলেন, ‘আপনি আসলে নির্দোষ, ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।’
‘এটিই সঠিক, সততা, নৈতিকতা এবং বাস্তবতা’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আদালতের এই শুনানির সময় উইলিয়ামসের পরিবার এবং সাধারণ মানুষ আদালতের বাইরে তার মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করছিল। কিন্তু কারাগারের প্রকোষ্ঠে তার সঙ্গে থাকা অন্যদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলেন না।
উইলিয়ামস বলেন, ‘আমি ততক্ষণ পযন্ত স্বস্তি অনুভব করতে পারব না, যতক্ষণ না তারা মুক্তি পাচ্ছে।’
ধর্ষণের ওই ঘটনা তদন্তের সময় উইলিয়ামসের বয়স ছিল ২২ বছর। কিন্তু পুলিশ কেন তাকে সন্দেহ করেছিল তা সে সময় জানা যায়নি।
১৯৮২ সালে লুইসিয়ানার ব্যাটল রাগে সিঙ্গাপুরের নাগরিক স্টিফেন ফোর্বস ওই নারীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করার পর পালিয়ে যায়। এ ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সময় ভিকটিমের বাড়িতে তার এক প্রতিবেশি প্রবেশ করেন। তখন ধর্ষক ওই নারীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশের কাছে ওই প্রতিবেশী এবং ভিকটিম তাদের বর্ণনায় একজন উঁচু-লম্বা ব্যক্তি এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে সে সময় জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ওই ভিকটিম এবং প্রতিবেশি কিছু ছবি পুলিশকে দেখিয়েছিল, যে ছবিগুলোর সঙ্গে উইলিয়ামসের ছবির সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য ছিল। তবে সে সময় ধর্ষণের এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।