‘এখনো ঘুম ভাঙলেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা চিন্তা করি। ভাবি, আজ হাইকোর্ট আর আপিল বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ কী কী মামলা আছে। তবে পরক্ষনেই মনে পড়ে সুপ্রিম কোর্ট না, যেতে হবে মন্ত্রণালয়ে। তখন মনের ভেতর কেমন হু হু করে ওঠে। ভীষণ রকম মিস করি আমার চিরচেনা সুপ্রিম কোর্টকে। কারণ আইনাঙ্গনে প্রায় ৩১ বছর ছিলাম কোনোদিন ব্যত্যয় ঘটেনি।’
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই তার আইনজীবী জীবনের কথা তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের তুমুল জনপ্রিয় আইনজীবী নেতা শ ম রেজাউল করিম আপাদমস্তক একজন আইনজীবী। মন্ত্রী হবার আগ পর্যন্ত টানা ৩১ বছর ছিলেন এ পেশায়। তাই এই দীর্ঘ সময়ের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট থেকে হঠাৎ করে দূরে সরে যাওয়াটা ভীষণ কষ্টের বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী হবার পর নিজের প্রিয় পেশা থেকে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘পেশাগত বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হওয়া, বিচারকের সামনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে না পারা, বিচারপ্রার্থীর পাশে দাঁড়াতে না পারা আমার কাছে অনেক বেদনাদায়ক মনে হয়। আমি মিস করি আদালত প্রাঙ্গণ।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দু’বারের নির্বাচিত সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ‘সেদিন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেকেই আমাকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কেঁদে দিয়েছিলেন আমাকে পেয়ে। বলছিলেন – রেজা ভাই, আমাদের ফেলে চলে গেলেন? কোর্টে এসে আমাদের প্রিয় রেজা ভাইকে দেখি না, ভীষণ মিস করি আপনাকে।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘সেদিনই বুঝেছি, আমার আসল ঠিকানা আদালতপাড়া, সুপ্রিম কোর্ট। মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব যেদিনই শেষ হবে, সেদিনই ফিরে আসব আমার আসল ঠিকানায়।’
মন্ত্রিত্বের সময়টুকু দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক নির্বাচিত সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর দায়িত্ব (মন্ত্রিত্ব) পালন করতে এসে বিচারাঙ্গনের মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে এসেছি। তবে মন্ত্রী হয়ে এখন আরও বড় পরিসরে সারাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। চেষ্টা করছি এই কাজ সততার সঙ্গে করার।’
নিজ মন্ত্রণালয় নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যে আস্থা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এত বড় একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, সে আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার থাকবে আমার মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত দফতর ও সংস্থার কাজের গতি বাড়ানো, সনাতনী পদ্ধতি বাতিল করে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা। সর্বোপরি দুর্নীতিমুক্ত করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কোনো রকম অনিয়ম ও বিধি পরিপন্থী কাজ যাতে না হয় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ শিগগিরই নেওয়া হবে। আমার মন্ত্রণালয়ের অধীন সব ডিপার্টমেন্টে গতি ফিরিয়ে আনবই। মন্ত্রিত্বের শেষ দিন পর্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব আপন করে যেতে চাই। আর যেদিন এই দায়িত্ব শেষ হবে সেদিন সজাচলে যাব সুপ্রিম কোর্টে। ওখানে অনেকেই আমার অপেক্ষায়।’ সূত্র : সময়ের আলো