বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের অন্যতম এস এইচ বি এম নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত সোমবার (২৫ মার্চ) কানাডার ফেডারেল আদালতে শুনানি শুরু হয়েছে।
গত বছরের জুনে বাংলাদেশ সরকারের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই শুনানি হয়েছে। তবে শুনানি শেষে বিচারক তাঁর সিদ্ধান্ত জানাননি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বিচারক সময় চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কানাডা থেকে বহিষ্কার এড়াতে নূর চৌধুরী সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ আবেদন করেন। আবেদনে নূর চৌধুরী বলেছিলেন, তাঁকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে ফাঁসি দেওয়া হবে। কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর প্রায় ১০ বছর ধরে ওই আবেদন ঝুলিয়ে রাখায় নূর চৌধুরীর বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সরকার গত বছরের জুন মাসে ওই মামলাটি করে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও পালিয়ে থাকা খুনিদের অন্যতম নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে টরি এলএলপি নামের আইনি পরামর্শক সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে একটি মামলা দায়ের করেছিল। সোমবার ওই মামলার শুনানি হয়েছে। শুনানিতে টরি এলএলপির আইনজীবী এবং কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের আইনজীবীরা তাঁদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। যুক্তিতর্ক শেষে বিচারপতি এ নিয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন বলে জেনেছি।’
কানাডায় নূর চৌধুরীর শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে নূর চৌধুরীর বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়েছেন। আদালতকে আইনজীবী অনুরোধ করেছেন কানাডা যেন নূর চৌধুরীর সর্বশেষ অবস্থানটা প্রকাশ করে। এ নিয়ে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের আইনজীবীরা তাঁদের যুক্তিতর্কে বলেছেন নূর চৌধুরীকে নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা না হলে কানাডার জনগণের কোনো ক্ষতি হবে না। এবং এখনো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
এ নিয়ে আবার শুনানি হবে, নাকি সোমবারের শুনানির ভিত্তিতে বিচারক মত দেবেন জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলছেন, বিচারপতি দ্বিতীয়বার শুনানি করবেন কি না, সেটা স্পষ্ট করে বলেননি। তিনি শুধু শুনানির বিষয়ে পরে মতামত জানানোর কথা উল্লেখ করেছেন।
কানাডা থেকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইনি প্রচেষ্টায় নূর চৌধুরীকে ফেরানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যায়েও এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুনে কানাডা সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে নূর চৌধুরীকে ফেরতের প্রসঙ্গটি তোলেন। এ সময় ট্রুডো তাঁর দিক থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ১৮ মার্চ শেখ হাসিনাকে সহমর্মিতা জানাতে ফোন করেন জাস্টিন ট্রুডো। ওই ফোনালাপের সময়ও তাঁদের মধ্য নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে কথা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গত বছর জুনে বাংলাদেশের পক্ষে কানাডার ফেডারেল আদালতে নূর চৌধুরীর বিষয়ে একটি ‘রিট অব ম্যানডামাস’ দাখিল করে এ বিষয়ে আদালতের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। আদালতের কাছ থেকে অবশ্য পালনীয় নির্দেশনা চাওয়ার জন্য রিট অব ম্যানডামাস দাখিল করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ চাইছে নূর চৌধুরীর দরখাস্তের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরকে আদালত নির্দেশনা দিক। বাংলাদেশ যে আবেদনটি করেছে সেটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান—যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নূর চৌধুরীর ‘প্রি-রিমুভাল অ্যাসেসমেন্ট রিস্ক’ আবেদন খারিজ করে দেয়, তবে তাঁকে দেশে ফেরাতে কোনো বাধা থাকবে না। আবার যদি তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়, তবে তাঁকে সেখানে অবস্থানের একধরনের স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নূর চৌধুরী একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এই কারণ দেখিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে আবার মামলা করতে হবে।