বাঙালির নাকি চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে! কোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে বা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমরা দিশেহারা হই। কাকে জানালে সাহায্য পাওয়া যাবে, সেই বিষয়টিও তখন মাথায় থাকে না। কক্সবাজারে চান্দের গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর সাহায্য চেয়ে লালমনিরহাটে বাবা-মায়ের কাছে প্রথম ফোনটা দিয়েছেন এমন ঘটনাও বন্ধুদের মধ্যে ঘটেছে। তবে এখন জরুরি প্রয়োজনে সেবা হাতের মুঠোয়। কেবল ডায়াল করুন ৯৯৯।
রাস্তায় কাউকে অপরাধের শিকার বা দুর্ঘটনায় ভুগতে দেখে মনঃকষ্ট নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে না। ৯৯৯–এ ফোন করে আপনি আপনার দায়িত্বটুকু পালন করতে পারেন। অনেক মানুষই এ ধরনের ঘটনা দেখে এড়িয়ে যান পরবর্তী সময়ে ‘পুলিশি ঝামেলা’র কথা ভেবে। তবে ৯৯৯-এ এ ধরনের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয় না, যদি তথ্যটি হয় সত্য।
২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা
নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯। দুর্বৃত্ত আক্রান্ত নারী কিংবা প্রভাবশালীদের কবলে পড়া পুরোনো গাছ উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে ৯৯৯। আশপাশ থেকে সচেতন নাগরিকদের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। আবার উঁচু দালানের কার্নিশে আটকে পড়া বিড়াল। ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাণীকেও। গত ১৫ মাসে ৯৯৯ সেবায় বলার মতো আরও অনেক গল্প তৈরি হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিলে ৯৯৯-এ ফোন করে মাদারীপুরের একজন জানান, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি শহরের ডিসির ব্রিজ এলাকায় সড়ক ও জনপথের জায়গার একটি পুরোনো কড়ইগাছ কাটতে শুরু করেছেন। ৯৯৯ জাতীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে তাঁর কলটি মাদারীপুর সদর থানায় ট্রান্সফার করা হয়। তাঁর অভিযোগ শুনে সদর থানার পুলিশ গিয়ে গাছটি রক্ষা করে। যদিও ততক্ষণে গাছের দুটি বড় শাখা কেটে ফেলা হয়েছিল। মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু নাঈম বলেন, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে শ্রমিকদের সরকারি গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সহায়তার জন্য প্রসারিত হাত
দুর্ঘটনায় সহায়তা, বাল্যবিবাহ রোধ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯-এ তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন লাখো মানুষ। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পেয়েছেন মানুষ।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেবা চালু হয়। পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি জরুরি কল সেন্টার হলো ৯৯৯ জরুরি সেবা। এখান থেকে শুধু পুলিশ নয়, জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ সেবা। ৯৯৯–এ ফোন করতে কোনো খরচও নেই, এটি টোল ফ্রি।
জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯–এর পুলিশ সুপার মো. তবারকউল্লাহ বলেন, শুরুতে এখানে প্রচুর কৌতূহলী মানুষের ফোন আসত। আর সে সময় মাত্র ৩৩টি ওয়ার্কস্টেশন ছিল। যার কারণে সেবাদাতাদের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি কাজ করত। তবে এখন আর সেটি নেই। এখন ১০০টির মতো ওয়ার্কস্টেশন। আর কৌতূহলী মানুষের এ ধরনের ফোন কলের সংখ্যাও কমেছে। তাতে এখন আগের চেয়ে ভালোভাবে সেবা দেওয়া যাচ্ছে।
মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত কোনো ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করলে তাঁর অবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা যায় কি না জানতে চাইলে তবারকউল্লাহ বলেন, এই জায়গায় তাঁদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তাঁদের যে সিস্টেম সেটা এভাবেই ডিজাইন করা যে কোনো ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করলে তাঁর পরিচয় (মুঠোফোন নিবন্ধনের সময় দেওয়া তথ্য) ও অবস্থান সেবাদানকারীর কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠবে। উন্নত দেশগুলোর জরুরি সেবা এভাবেই চলছে। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সব কটি মোবাইল ফোন অপারেটর ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা জড়িত, তাদের সবাইকে এই বিষয়ে এখনো একত্র করা যায়নি। চেষ্টা চলছে।
আর ৯৯৯-এ ফোন করে কাউকে পরবর্তী সময়ে কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হবে না উল্লেখ করে তবারকউল্লাহ বলেন, এখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তাঁর তথ্য প্রকাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্যদাতার পরিচয় প্রয়োজন হয়। সেটাও নিজস্ব চ্যানেলে মোকাবিলা করা হয়।
এই সেবা পেতে হলে বাড়তি কিছুই করতে হয় না। শুধু ৯৯৯-এ একটি কলই যথেষ্ট। বাকিটা হেল্প ডেস্ক থেকেও করা হয়ে থাকে।