দুর্নীতির মামলার দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে প্যারোলের বিষয় নিয়ে তিনি নিজে কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো কথা বলেনি বা আবেদন করেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও তার প্যারোলে মুক্তি বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে বর্তমান কমিটির বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি শুধু গণমাধ্যম থেকেই আমরা জেনেছি। তিনি বলেন, অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকারের সদিচ্ছা নেই। রাজনৈতিক মামলা দিয়ে তাকে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
বিদায়ী সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো মামলায় খালেদাকে হাইকোর্ট জামিন দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের জন্য কাজ না করে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করছেন।’
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে তিনি (খালেদা জিয়া) নিজে কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো কথা বলেনি বা আবেদন করেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও তার প্যারোলে মুক্তি বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়নি।’
আগাম জামিনের বিষয়ে নিজের সফলতা তুলে ধরে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় যেন সর্বোচ্চ আদালত জামিন দিতে পারে সেজন্য প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেনদরবার করেছি। ফলে আজকে সব বেঞ্চই আগাম জামিন দিচ্ছেন এবং বিচারপ্রার্থী মানুষ বিচার পাচ্ছে।’
বিদায়ী সভাপতির ভাষ্য, ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে কারাবন্দি আছেন। তিনি দিন দিন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’
সভাপতি থাকাকালে বিচার বিভাগের ওপর হওয়া অনেক হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ছিল ঐতিহাসিক। পরবর্তীতে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের কারণে বিচার বিভাগের ওপর আরও কঠিন হামলা এসেছে। তখন প্রধান বিচারপতিকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠানো এবং পদত্যাগ করানোর মাধ্যমে সেই সময়কার হামলা সবার মনে আছে। তবুও এত কিছুর মধ্যেও আইনজীবী সমিতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়েছি।’
অন্যদিকে, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে এটা একটা কৌশল হতে পারে। এ সময় সরকারের দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমিতির বিদায়ী সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (পুনরায় নির্বাচিত সম্পাদক), সহ-সভাপতি ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, এম গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহ-সম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সদস্য মাহফুজ বিন ইউসুফ, সাইফুর আলম মাহমুদ, ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, শাহানা পারভীন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মো. আহসান উল্লাহ ও মোহাম্মদ মেহদী হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।